পরিমিতা
তৃতীয় পর্ব
গল্পের শুরু এখান থেকে
সোহান বলে আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো সেদিন আমাকে যেই লোমশ অবয়বটি ধরেছিল, সেটাই কি সেই অভিশপ্ত অশুভ শক্তি? মিরাজ বলে স্যার আপনি বিপদের মধ্যে আছেন। আপনি সেই বন্দী থাকা অশুভ ও অভিশাপ শয়তানটিকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন সেটা শুধু বাগান নয় যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারবে। কে জানে এর পরবর্তী শিকার কে হতে পারে। সোহান অবাক হয়ে ভাবে সর্বনাশ এ আমি কি করে ফেললাম। আমার কারনে একটা অশুভ ও অভিশপ্ত ভয়ঙ্কর শয়তান মুক্ত হয়ে গেল। সে চিন্তায় পরে যায়। স্যার আপনি কিন্তু বড় বিপদে পরতে যাচ্ছেন। আপনি যতো দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যান। আমরা চাইনা আপনার মতো ভালো সৎ একজন লোক মারা যাক। স্যার আপনি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যান।
সোহান বলে আচ্ছা তোমাদের কথা সত্যি হলে এই ভয়ঙ্কর অশুভ শয়তানটি এখন মুক্ত হয়েছে। জ্বি স্যার সেটা এখন যে কারো প্রা*ন কেড়ে নিতে পারে। আপনি যতো দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যান। সোহান বলে আমি কোথাও যাচ্ছি না। যেহেতু এই অশুভ শক্তিটাকে আমিই জাগিয়ে তুলেছি। তাই আমি এর শেষ না দেখে এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না। খালেদ বলতে থাকে স্যার আপনার কি প্রানের ভয় নেই? নিজের কথা একবার ভাবুন। সোহান বলে আমি নিজেকে নিয়ে কখনোই ভাবিনি। আমি চাই না আমার একটা ভূলের কারনে অন্য কারো প্রান চলে যাক। আমি এর শেষ না দেখে এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না। তখনই সোহান বাতাসে মিষ্টি গন্ধ পায়। সে বুঝতে পারে সুন্দরী মেয়েটি হয়তো অদৃশ্য হয়ে তার আশেপাশেই কোথাও আছে।
খালেদ ও মিরাজকে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা তোমরা কি এখানে কোনো সুন্দর সুগন্ধ পাচ্ছো? মিরাজ বলে স্যার এখানে কতো কতো ফুল আছে। হয়তো ফুল থেকে এই সুগন্ধ আসছে। সোহন বলে না এটা কোনো ফুল থেকে আসা সুগন্ধ নয়। এটা ঐ সুন্দরী মেয়ের উপস্থিতি বোঝাচ্ছে। মিরাজ বলে স্যার আপনি যে কিসব বলেন না। ঠিক আছে তোমরা দুজন এখন যেতে পারো। আমি একটু বিশ্রাম নেবো। একথা বলে সে বিছানায় শুয়ে পরে। মিরাজ ও খালেদ সেখান থেকে চলে যায়। সোহান কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে। আর খানিক বাদেই সে দেখতে পায় তার পাশে সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটি সোহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সোহান এক দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটি সোহানের হাত স্পর্শ করতেই তার হাতের ক্ষতস্থান ভালো হয়ে যায়। তখনই মেয়েটি যেতে চাইলে সোহান তার হাত ধরে ফেলে।
আর সাথে সাথে মেয়েটি কান্না করতে থাকে। সোহান জিজ্ঞেস করে আচ্ছা এই মেয়ে তুমি কান্না করছো কেন? মেয়েটি জবাব দেয় আপনি এটা কি করলেন! আপনি আমাকে স্পর্শ করলেন কেন? সোহান বলে তোমাকে স্পর্শ করেছি তো কি হয়েছে। তুমিই তো আমাকে স্পর্শ করেছো তখন কিছু হয়নি। তাহলে এখন আমি স্পর্শ করাতে তোমার কি হলো। মেয়েটি বলে আপনি আমার অনেক ক্ষতি করে ফেললেন। সোহান অবাক হয়ে জানতে চায় আমি আবার তোমার কি ক্ষতি করলাম? মেয়েটি বলে আমি..আমি..!
সোহান জিজ্ঞেস করে আচ্ছা তুমি কে? আর আমার কাছে কেন এসেছো? মেয়েটি জবাব দেয় আমি পরিমিতা। সোহান বলে বাহ খুব সুন্দর নাম তো তোমার।
__তা তুমি আমার কাছে কেন?
__আমি এসেছি একটা কাজে।
__আমার কাছে একটা মেয়ে এসেছে কাজের জন্য। তাও আবার সুন্দরী একটা মেয়ে। তা কি কাজে এখানে এসেছো?
__আমি আমার কাজটা একা সম্পন্ন করতে পারবো না। সেজন্য আমার তোমাকে কাছে চাই। তোমার সহযোগিতা ছাড়া আমি এটা করতে পারবো না।
__আচ্ছা তুমি কে বলো তো? আর আমার রুমে ডুকলে কি করে?
__আমি যেকোনো সময় যে কোনো জায়গাতে যেতে পারি। সেই ক্ষমতা আমার আছে।
__তাহলে তো ভালোই। আচ্ছা আমি তোমার কি ক্ষতি করে ফেললাম বললে না তো।
__সে অনেক কথা। কিন্তু আপনি আমাকে ছুয়ে ভালো করেননি।
__কেন ভালো হয়নি বলো।
ঠিক তখনই সোহানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠে সে রুম থেকে বাহিরে বের হলে দেখে বাহিরে জ্যোৎস্না রাত। চাঁদের আলোতে পুরো বাগানটি সুন্দর করে আলোকিত হয়ে আছে। সোহান তখনও সেই মিষ্টি সুগন্ধ পাচ্ছে। সে আস্তে আস্তে বাগানের দিকে হাটতে থাকে। ঠিক তখনই সে খেয়াল করে বাগানের মাঝখানে একটি মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সোহান দ্রুত সেখানে গেলে দেখতে পায় একটি মেয়ে মুখ নিচু করে মাটিতে বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি কান্না করছে। সোহান আস্তে গিয়ে মেয়েটিকে স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করে এই মেয়ে কে তুমি? মেয়েটি তার দিকে তাকালে সে খুবই অবাক হয়। আর এই মেয়েটিই তো প্রতিরাতে তার স্বপ্নে আসে।
আচ্ছা তুমিই কি সেই মেয়ে যে রোজ রাতে আমার স্বপ্নে এসেছিলে? মেয়েটি বলে হ্যাঁ আমিই তোমার স্বপ্নে আসতাম। সোহান জিজ্ঞেস করে আচ্ছা তোমার নামটা কি যেন…! মেয়েটি বলে আমি পরিমিতা। পরিমিতা আমার নাম। সোহান বলে খুবই সুন্দর নাম। তা তুমি কেন আমার স্বপ্নে এসেছিলে? পরিমিতা জবাব দেয় আমি এখানে একটা কাজে এসেছিলাম। মাঝখান থেকে তুমি এসে আমার কাজে বাধা দিলে। সোহান বলে__কেন আমি আবার কি করলাম?
__ঐ যে তুমি আমাকে স্বপ্নে স্পর্শ করেছো।
__কিন্তু আমি তো তখনো তোমাকে বাস্তবে স্পর্শ করেছিলাম না। সেটা তো স্বপ্নে স্পর্শ করেছিলাম।
__সেটাই তো আমার জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
__সোহান পরিমিতার রূপ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আচ্ছা তুমি কি সত্যিই পরি?
__কেন তোমার বুঝি বিশ্বাস হচ্ছে না?
__না মানে আমি এসব পরি বিশ্বাস করিনা। আমি ছোটবেলা মা চাচিদের মুখে পরি সম্পর্কে অনেক শুনেছি। কিন্তু তুমি বলছো তুমি পরি। এটা আমি মানতে পারছি না। আর পরিষদের তো পাখা থাকে। কই তোমার তো কোনো পাখা দেখছি না।
__দেখো আমরা পরিরা আছি। তবে আমাদের জগতটা তোমাদের থেকে ভিন্ন। আমরা যখন খুশি সেখানেই যেতে পারি। আর আমাদের জাতির মধ্যে কারো পাখা নেই। আর পরির কোনো পাখা থাকে না। আর তুমি যে কথা বলছো তা মানুষের কল্পনা। বাস্তবে আমরা পাখাবিহীন পরি। আর আমরা পাখা ছাড়াই উড়তে পারি। তুমি তোমার মা চাচির মুখে যেসব পরির কথা শুনেছো সেগুলো সবই তাদের কল্পনা। বাস্তবে আমাদের কোনো পাখা নেই।
__আচ্ছা তুমি এতো সুন্দর কেন? শুনেছি পরিরা নাকি অনেক সুন্দর হয়। তুমি পরি বলেই কি এতোটা বেশি সুন্দর।
__না এমনটা নয়। তোমাদের মানুষদের
মধ্যে যেমন সব মিলিয়ে আছে। তেমনি আমাদের পরিদেরও ভালো মন্দ মিলিয়ে আছে। কোনো কোনো পরি দেখতে এতোটা সুন্দর না।
__কিন্তু পরিমিতা তুমি কিন্তু খুবই সুন্দরী।
__জানি সেটা আমাকে অনেকেই বলেছে। সবাই বলে আমি নাকি খুবই সুন্দর।
__তুমি শুধু সুন্দরী নয়। তোমার সবকিছুই আমাকে পাগল করে দেয়। তোমার কথা,তোমার আচরণ,তোমার উপস্থিতিতে যে সুগন্ধ পাওয়া যায় তার সবকিছুই আমাকে পাগল করে দেয়। জানিনা, যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম। সেদিন থেকেই আমি তোমার প্রেমে পরেছিলাম। __তুমি এসব কি বলছো! আমি পরি। সবসময়ই এটা মাথায় রেখে কথা বলবে।
__আচ্ছা পরিমিতা আমাকে একটা কথা বলো..
ঠিক তখনই সেখানে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। ঠিক তখনই পরিমিতা সোহানকে একটা হাত ধরে শূন্যে ভাসতে থাকে। সোহান শূন্যে ভাসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। সে বলতে থাকে এটা আমি কি দেখছি। আমি দেখছি সত্যি সত্যি শূন্যে উড়ছি। পরিমিতা বলে হ্যাঁ এই মুহুর্তে এখানে থাকাটা আমাদের ঠিক হবে না। সেই অশুভ শয়তানটি এখানে এসে যাবে। তাই আমরা এখন অন্য কোথাও চলে যাবো।
সোহান তুমি কিন্তু একদমই ভয় পাবে না। যতক্ষন আমি তোমার পাশে আছি ততক্ষণ কেউই তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। সোহান অবাক দৃষ্টিতে পরিমিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। খানিক সময় পরিমিতা ও সোহানের চোখাচোখি হয়। তারা দুজনেই শূন্যে ভাসতে ভাসতে অন্যত্র যেতে থাকে। সোহানের কাছে সবকিছুই স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সে তো নিজের হাতে একটা চিমটি কেটেই ফেলে। না এটা কোনো স্বপ্ন নয়। সে এখন যা কিছু দেখছে তা সবকিছুই বাস্তব। এভাবে একটা সুন্দরী মেয়ে মানে পরিমিতার সাথে শূন্যে ভেসে বেড়াতে সোহানের বেশ ভালোই লাগছে। আকাশে শূন্য থেকে নিচে তাকালে সবকিছুই খুবই সুন্দর লাগছে। সোহান পরিমিতার দিকে এক পলকে তাকিয়ে থাকে। আচ্ছা পরিমিতা এখন তুমি আমাকে এই শয়তানটির হাত থেকে বাঁচালে কেন?
পরিমিতা বলে কেননা তোমাকে আমার ভালো লাগে। তুমি খুব ভালো স্বভাবের একটি ছেলে। তোমার মাঝে আমি ভালো লাগার সবকিছু খুঁজে পাই। সোহান পরিমিতার মুখে এসব কথা শুনে খুবই খুশি হয়। সোহান শূন্যে ভেসে সাদা মেঘ বেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে পরিমিতার একটা হাত শক্ত করে ধরে আছে। সোহান বলে আসলে আমি ছোটবেলা বইয়ে যেসব পরির কথা পড়েছিলাম। আজ সেসব কথা ভূল প্রমাণিত হলো। মা চাচিরাও ভূল বলেছিল। আর তুমি পরি হলেও খুবই সুন্দর। তারা শূন্যে ভাসতে ভাসতে সুন্দর একটি মনোরম নির্জন জায়গায় এসে থামে। যেখানে চারপাশে পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যাচ্ছে। সামনেই বিশাল পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানি দেখা যাচ্ছে। সোহান পরিমিতাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলতে থাকে। বাহ তুমি আমাকে কতো সুন্দর জায়গায় নিয়ে আসলে। পরিমিতা বলে তুমি খুশি তো। সোহান বলে হ্যাঁ আজ আমি অনেক খুশি।
তারা দুজনেই ঝর্ণার কাছে গিয়ে থামে। সোহান বলে আমার না ঝর্ণা দেখতে খুবই ভালো লাগে। তুমি তো জানো না আমি একজন ব্লগার। বাস্তবে আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লগ ভিডিও করে থাকি। আমি মূলত প্রকৃতির এই সৌন্দর্যটা সবার সামনে আমার ভিডিওতে তুলে ধরার চেষ্টা করি। পরিমিতা সোহানের কথা শুনে খুশি হয়। আসলেই তুমি খুব ভালো। সোহান তাকে ধন্যবাদ জানায়। পরিমিতা বলে চলো না আমরা সামনের দিকটাই যাই। চলো যাই। তারা আবারো শূন্যে ভেসে সেই ঝর্ণার সামনে গিয়ে থামে। সোহান বলে জানো পরিমিতা জীবনে আমি অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় গিয়েছি। অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু আজ যা কিছুই দেখছি তা সবকিছুই আমার দেখা সুন্দর কিছু। জানো আমি কেন কথা বলেছি? পরিমিতা বলে কেন?
__কারন আজ আমার সামনে তুমি আছো। আর তুমি খুবই সুন্দর। তোমার রূপ থেকে আমি অনেক কিছুই ভূলে যাচ্ছি।
সোহান দৌড়ে গিয়ে ঝর্ণার পানি হাতে নিয়ে পরিমিতার দিকে ছূড়ে মারে। এতে পরিমিতাও হাতে পানি নিয়ে সোবহানের গায়ে ছিটিয়ে দেয়। তারা দু্জনে সেখানে খু*নসুটিতে মজেছে। এভাবে পানি ছিটানো খেলায় দুজনে মেতে উঠেছে। হঠাৎই সোহান পা পিছলে উঁচু পাহার থেকে পরে যাচ্ছে। সোহান চিৎকার করতে পরিমিতার নাম ধরে ডাকতে থাকে। আর তখনই পরিমিতা তার দিকে তাকায়। পরিমিতা চমকে উঠে। সে দ্রুত শূন্যে ভাসতে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে সোহানকে ধরে ফেলে। একটুর জন্য সোহান প্রানে বেঁচে যায়। পরিমিতা দ্রুত সোহানকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে নিরাপদ জায়গাতে নিয়ে আসে। সোহান পরিমিতাকে জড়িয়ে ধরে। পরিমিতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সোহানের মনের অবস্থাটা সে বুঝতে পারছে। সোহান বলে পরিমিতা আজ তুমি আমার প্রা*ন বাঁচালে। আজ তুমি না থাকলে আমি বেঁচে থাকতাম না।
তুমি আমাকে নতুন জীবন দান করেছো। পরিমিতা তোমাকে কি বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো তার ভাষা আমার জানা নেই। পরিমিতা তুমি আমাকে চিরঋনী করে দিলে। আমি তোমার এই ঋন কোনদিনই শোধ করতে পারবো না। পরিমিতা আমি তোমাকে..আর তখনি পরিমিতা বলে এই তুমি ছারবে নাকি এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখবে। সোহান পরিমিতাকে ছেড়ে দিয়ে বলতে থাকে। জানো পরিমিতা আমি না জীবনে মাকে ছাড়া কাওকে বিশ্বাস করতে পারিনি। আমার মা আমার বিশ্বাস আমার সবকিছু। আজকের পর থেকে মায়ের পরে তোমার প্রতি আমার বিশ্বাস স্থাপন হয়েছে। আমি জানি তুমি আমার সেই বিশ্বাসের মর্যাদাটুকু রাখবে। পরিমিতা আমি তোমাকে ভালোবাসি। সোহানের মুখে এই কথা শুনে পরিমিতা বলে দেখো সোহান তুমি হলে মনুষ্য জাতি। আর হলাম ভিন্ন জগতের একজন পরি। আমার সাথে তোমার এই সম্পর্কটা হয় না।
দেখো সোহান ঠিক এই মুহুর্তে তোমার মনের অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু দেখো আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। সোহান মন খারাপ করে পরিমিতার থেকে একটু দূরে গিয়ে দাড়ায়। দেখো পরিমিতা বাসা থেকে মা আমার জন্য মেয়ে দেখছে। কিন্তু আমি কখনোই রাজি নয়। তোমাকে দেখার পর থেকে আমি অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। দেখো পরিমিতা আমি তোমার সাথে কোনো মজা করছি না। আমি সত্যি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমাকে নিয়ে আমি সারাটা জীবন কাটাতে চাই। তুমি আর আমার কথায় অমত করো না। তোমাকে জীবনে না পেলে আমি এই জীবন রাখবো না। আমি নিজেকে শেষ করে দেবো। তুমি যদি আমাকে ভালো নাই বাসো তাহলে আমাকে বাঁচালে কেন? পরিমিতা বলে দেখো সোহান আমরা তোমাদের থেকে ভিন্ন জাতি। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক মানায় না। এটা কখনোই সম্ভব নয়। সোহান বলে কেন সম্ভব নয়। পরিমিতা বলে দেখো সোহান এতো কথা বলতে পারবো না এখন। আমার হাতে সময় কম। এখন আমাদের নিরাপদ জায়গাতে ফিরতে হবে।
সোহান বলে এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি? পরিমিতা যেখান থেকে এসেছি এখন সেখানে যেতে পারবো না। কেননা সেখানে সেই ভয়ানক শয়তানটি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা সেখানে গেলে আমাদের জন্য ভালো হবে না। সোহান জানতে চায়। আচ্ছা পরিমিতা তুমি তো একটা পরি। তাহলে তুমি কি সেই ভয়ঙ্কর শয়তানটাকে ধ্বংস করতে পারো না? জবাবে পরিমিতা বলে না এটা কখনোই সম্ভব নয়। আমি পরি হলেও সেই শয়তানটাকে শেষ করার মতো কোনো শক্তি আমার মাঝে অবশিষ্ট নেই। আমি সেটাকে কখনোই শেষ করতে পারবো না। সোহান জিজ্ঞেস করে __আচ্ছা সেই শয়তানটি কে? আর সেটা কোথা থেকে এসেছে?
__সেই অভিশপ্ত শয়তানটি আমাদের জগতেরই একজন পুরষজাতি। সেই শয়তানটি আমার রূপ দেখে আকৃষ্ট হয়েছিল। আমাদেরও তোমাদের মতো বিয়ে হয়। তো সেই শয়তানটি আমার পরিবারের কাছে গিয়ে বিয়ের কথা বলে। কিন্তু আমার পরিবার তার সাথে আমাকে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি।
তাই তো সেই শয়তানটি সুযোগ বুঝে আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে তাতে ব্যর্থ হয়। এটা সবার মাঝে জানাজানি হলে আমাদের রাজ্যের প্রধান তাকে অভিশপ্ত ঘোষণা করে পৃথিবীতে আটকে রাখে। ভেবেছিলাম সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু না সেই শয়তানটির মতো আরো অনেকেই আমাকে বিয়ের কথা বলে। কিন্তু তাদের কাওকেই আমার পছন্দ হয়নি। তাই আমাদের রাজ্য প্রধান অনেক ভেবে আমাকেও পৃথিবীতে আটকে রাখে। আমি পৃথিবীতে আসার পর সেই অভিশপ্ত শয়তানটি অনেক খুশি হয়। সে রোজ আমাকে কাছে পেতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমি কৌশলে সবসময়ই তার থেকে দূরে থাকি। আমি এখানে থাকতে চাই না। আমি চাই আমি আবারো পরিবারের কাছে ফিরে যাই। মা বাবার কাছে থাকি। কিন্তু সেটাও অতো সহজ না। আমাকে আবারো আমার রাজ্যে ফিরে যেতে হলে কাওকে স্ব-ইচ্ছায় প্রা*ন ত্যাগ করতে হবে। আর সেটাও শয়তানটিকে ধ্বংস করে তারপর করতে হবে। মানে শয়তানটি ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথেই সেই মানুষটাও মরে যাবে। আর আমারও নিজের রাজ্যে ফিরে যেতে সহজ হবে।
আর এই কাজ করতে গেলে আমার একজন ভালো ও সৎ সাহসী মানুষ দরকার। ভেবেছিলাম তোমাকে দিয়ে আমি আবারো আমার রাজ্যে ফিরে যাবো। তোমার মাঝে আমি সেইসব বৈশিষ্ট দেখেছি। যদিও এই অভিশপ্ত শয়তানটিকে তুমি এখানে জাগিয়ে তুলেছো। তাই সে তোমাকে না শেষ করা পর্যন্ত শান্ত হবে না। আর এইসে তোমার পিছু নিয়েছে। দেখো তোমার হাতে যেই কাটা দাগটি আছে। সেটি কিন্তু সাধারন কোনো দাগ নয়। এই দাগটি তোমার প্রান নাশ করতে পারে। তাইতো প্রতি রাতে আমি তোমার স্বপ্নে আসতাম। আর তোমাকে স্পর্শ করে তোমার হাতের কাটা দাগটি ভালো করে দিতাম। আমি তোমাকে আমার প্রয়োজনেই বাঁচিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার মাঝে যেসব বৈশিষ্ঠ দেখলাম তাতে তোমাকে আমার প্রয়োজন থেকে বাদ দিতে হলো। এখন আর আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। পরিমিতার কথাগুলো শুনে সোহান অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে…
গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে,তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার একটা কমেন্টই ভৌতিক গল্পকে নতুন গল্প লিখতে উৎসাহীত করবে। আর একটা কথা ,আপনার আশেপাশে পরিচিত যারা ভৌতিক গল্প পড়তে পছন্দ করে। তাদেরকে ভৌতিক গল্পে আমন্ত্রন করে গল্প পড়ার সুযোগ করে দিন। যাতে তারাও গল্পগুলো পড়তে পারে। সবাইকে ভৌতিক গল্পের বেপারে জানান ও ভৌতিক গল্প পড়তে উৎসাহিত করুন।
কপিরাইট: সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ -
গল্প : পরিমিতা (তৃতীয় পর্ব)
লেখক : আনোয়ার হোসেন