ভূতের গল্প । পরিমিতা - দ্বিতীয় পর্ব

পরিমিতা
দ্বিতীয় পর্ব
লেখক: আনোয়ার হোসেন

গল্পের শুরু এখান থেকে...
সোহান চাঁদের হালকা আলোতে সেদিকে হাটতে থাকে। টর্চটি জলন্ত অবস্থায় সেখানে পরে আছে। তাই মিরাজ ও খালেদ বুঝতে পারেনি। সোহান যতোই বাগানের সেই নিষিদ্ধ প্রান্তের দিকে হাটছে ততোই সেই অদ্ভুত আওয়াজটি বেড়েই চলছে। সোহান ভাবে এতো রাতে একটা সুন্দর ফুলবাগানে ঐ জায়গাতে আসলে আছে টা কি!! আর আওয়াজটি আসলে কিসের! সে হাটতে হাটতে প্রায় সেই নিষিদ্ধ এরিয়াতে চলে যায়।সোহান দেখতে পায় সেখানে বাগানের একপাশে বিশাল একটি রেইনট্রি কড়ই গাছ।আর সেই গাছের ডালপালাগুলো অনেকটা বাগানের উপরে চলে এসেছে। ডালগুলোর দিকে তাকাতেই সোহানের গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। কেননা যেই না সোহান সেদিকে তাকায়, সে দেখে গাছটির ডালে ভয়ঙ্কর একটি কালো কুচকুচে মানুষের মতো দেখতে বিশাল আকৃতির কিছু একটা বসে আছে।এটা দেখা মাত্রই সোহান আর সামনে যেতে সাহস পায় না। সে ভাবে এটা আবার কি?

রেইন্ট্রি কড়ই গাছের ডালপালার উপর বসে আছে। সোহান ভয়ে ভয়ে পেছনে সরে আসে। মনে মনে ভাবছে আচ্ছা সেই বিশালদেহী ভয়ঙ্কর জিনিসটা আমাকে দেখে ফেলেনি তো আবার। সে ভয়ে পেছন ফিরে তাকানোর সাহস পায়নি। এক পা দু পা করে সে সামনের দিকে হাটে। মনে মনে ভাবে মিরাজ ও খালেদের কথা শুনলেই ভালো হতো। যদিও এর আগে সে কোনোদিনই ভূত প্রেত দেখেনি। তবুও সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না ভূত বলতে কিছু আছে। হঠাৎই সে খেয়াল করে। এতোক্ষন যাবত হেটেও সে একই জায়গাতে আছে। এটা বুঝতে পেরে সে পেছনে ফিরে তাকায়। আর তাকাতেই সে দেখে গাছে বসে থাকা বিশালাকার সে ভয়ঙ্কর জিনিসটি লম্বা একটা হাত দিয়ে সোহানকে ধরে রেখেছে। সোহান এতোক্ষন বেপারটি খেয়াল করেনি। ভয়ে তার প্রান যায় যায় অবস্থা। ততক্ষণে তার হাতে থাকা ক্যামেরাটি মাটিতে পরে যায়। সে নড়াচড়া করতে পারছে না। ভয়ঙ্কর সেই লোমশ হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছে না।

হঠাৎই সোহানের হাতে সেই অবয়বটি লম্বা নখের আঁচড় কাটে। সোহান ব্যথায় আৎকে উঠে। তার হাতে তিব্র যন্ত্র‌না হচ্ছে। এই মুহুর্তে সে ঠিক কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তখন সে মিরাজ ও খালেদের কথা ভাবে। তাদের কথা ভাবতে ভাবতে সে চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকার শুনে মিরাজ ও খালেদ দৌড়ে সেখানে যায়। মিরাজ হাতে দিয়াসলাই জ্বালিয়ে সেটাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। তখনই সেই ভয়ঙ্কর অবয়বটি সোহানকে ছেড়ে দেয়। তারা জলদি সেখান থেকে দৌড়ে পালাতে থাকে। একসময় তারা অনেকটা দূরে চলে আসে। মিরাজ বলে, স্যার আপনাকে কতো করে বারন করেছি তবুও আপনি সেই নিষিদ্ধ এরিয়াতে চলে গেলেন। এখন যদি আপনার কিছু একটা হয়ে যেতো। তাহলে আমাদের চাকরিটা চলে যেত। সোহান তাদের হাতে আরো কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে দেখো যা হয়েছে তা যেন কেউ না জানে। সোহান ভয়ে ভয়ে তার রুমে ফিরে আসে। সে ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ভিডিও ফুটেজ দেখতে থাকে। সোহান কিছুটা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে।

একি সেই ভয়ঙ্কর লোমশ অবয়বটি তো ক্যামেরাতে আসেনি। তার মানে সেই ভয়ঙ্কর জিনিসটা ক্যামেরাতে আসে না। কিন্তু সেদিনের দেখা মেয়েটা কে ছিল! যে তার ক্যামেরাতে ধরা পরেছিল। তখনই সে হাতে তিব্র যন্ত্র‌না পেতে থাকে। তার ডাকে মিরাজ ও খালেদ এগিয়ে আসে। স্যার বলেন আমরা আপনার জন্য কি করতে পারি। সোহান বলে দেখো তো আমার হাতে অনেকটা আঁচড় লেগে কে*টে গেছে। তুমি একটু এখানে ব্যান্ডেজ করে দাও তো। মিরাজ এসব কাটাছেড়া দেখতে পারে না। তাই খালেদ এসে সোবহানের হাতে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেয়। ঠিক তখনই বাসা থেকে তার মা ফোন দেয়। সোহান ফোন রিসিভ করে তার মাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে __আম্মু আপনি ঠিক আছেন তো?
__হ্যাঁ বাবা আমি একদম ঠিক আছি।
__তা আম্মু আপনি ঠিকমতো ঔষধ খাচ্ছেন তো?
__হ্যাঁ বাবা আমি ঠিকমতো ঔষধ খাচ্ছি। তা বাবা তুই কেমন আছিস?
__ আলহামদুলিল্লাহ আম্মু তোমার দোয়া আমার সাথে সবসময়ই আছে। আমি কি করে মন্দ থাকি বলো।

__তুই ঠিকই বলেছিস বাবা। সন্তানের প্রতি মায়ের দোয়া সবসময়ই থাকে। তবুও সন্তানকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। দেখ বাবা তুই যেখানেই যাস,সাবধানে থাকবি কিন্তু।
__হ্যাঁ আম্মু আমি..আঃআঃহ!!!
__কি হয়েছে বাবা তোর? তুই এমন করছিস কেন?
__আম্মু আমি ঠিক আছি। হাতে একটুখানি কেটে গেছে। তাই একটু লেগেছে।
__কি বলিস তুই! কিভাবে কাটলো? আর কতোটুকু কেটেছে? বাবা ক্ষতস্থানে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখ। আর ব্যথার ট্যাবলেট খেয়ে নে।
__হ্যাঁ আম্মু আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে নেবো। সামান্য একটু কেটেছে মাত্র। তুমি কোনো চিন্তা করো না।
__ দেখ বাবা তোর মুখে এই কথা শুনে আমি কি স্বাভাবিক থাকতে পারি? তা আসল কথাটাই তো তোকে বলা হয়নি। আসল কথাটা হলো বাবা সোহান তুই তো জানিস আমার অনেক বয়স হয়েছে। এই বয়সে একা সংসার সামলাতে তুইতো বুঝিসই।

__দেখো আম্মু আমার হাতে সময় কম। তাই আসল কথাটা কি বলো শুনি।
__বাবা সোহান আমি না তোর জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে দেখেছি। মেয়েটিকে আমার বেশ পছন্দও হয়েছে। আমি ঠিক করেছি, তোর জন্য এই মেয়েকেই আমার ঘরের বউ করে নিয়ে আসবো।
__দেখো আম্মু, আমি এখনি বিয়ে করবো না। আমার এখনো অনেক কিছু করার বাকি আছে। এখনি বিয়ে করে ফেললে আমার কাজগুলো এখনো অসমাপ্ত রয়ে যাবে। তাছাড়া আমি এখনো বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়।
__সোহান বাবা এমন কথা বলিস না। মেয়েটি যেই না সুন্দর সেই না সুন্দর তার আচার_আচরণ। রূপে গুনে কোনো দিক থেকেই মেয়েটির মাঝে কোনোকিছুই কমতি নেই। আমি তো এই মেয়েকেই তোর বউ করে আনবো।
__আচ্ছা আম্মু তুমি সাবধানে থাকবে। নিজের খেয়াল রেখো আম্মু। এখন রাখছি।

সোহান তার মাকে সালাম দিয়ে কলটি কেটে দেয়।

ততক্ষণে মিরাজ ও খালেদ সেখান থেকে চলে যায়। সোহান তার হাতে প্রচন্ড ব্যথা পাচ্ছে। আজ তার কেন জানি কিছুই ভালো লাগছে না। তাই সে রুমের দরজা খোলা রেখেই শুয়ে পরে। কখন যে সে ঘুমিয়ে পরে তার কিছুই মনে নেই। রাতের আকাশে চাঁদটা অনেকটাই হেলে পরেছে। চারপাশে বাতাস বইছে। হঠাৎই সোহান দেখতে পায় তার রুমে কেউ একজন প্রবেশ করছে। আর তখনই পুরো রুম জুড়ে সুন্দর এক মিষ্টি গন্ধে ভারি হয়ে উঠে। সোহান মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করলে দেখে কোনো মেয়ে মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে। সোহান কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারেনা। কিছুক্ষণের জন্য তার মুখ থেকে কোনো আওয়াজই বের হয়না। মেয়েটির চেহারা দেখা যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে মেয়েটি বিছানায় তার পাশে এসে বসে। সোহান দেখে মেয়ে নয় যেন আকাশ থেকে পরি নেমে এসেছে। মেয়েটি কোনো কথা না বলে তার হাতটি ধরে। সোহান ভাবে আহা আমার এই হাতে কে*টে গেছে। তাই সে কিছু বলতে চাইলে বুঝতে পারে মেয়েটির স্পর্শতে তার কিছুই হয়নি।

মেয়েটির স্পর্শ পেতেই তার সারা শরীরে শিহরন বয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই তার হাতের ক্ষ*তস্থান ভালো হয়ে যায়। সোহান খেয়াল করে এখন তার হাত পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে। এটা দেখে সে অনেক খুশি হয়। সে তখন ব্যান্ডেজটি খুলে ফেলে। সোহান মেয়েটিকে ধন্যবাদ দিতে যেইনা মেয়েটির দিকে তাকায়। তখনি সে দেখে সেখানে কেউই নেই। সোহান মেয়েটির কথা ভেবে মন খারাপ করে। হঠাৎই মেয়েটি কোথায় চলে গেল। তাখনি কে যেন তাকে আওয়াজ করে ডাকতে থাকে। সোহান সাথে সাথে ঘুম থেকে জেগে উঠলো। সে দেখতে পায় তার সামনে মিরাজ দাড়িয়ে ও খালেদ দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারে আজ কখন যে ভোর হয়ে গেল। সে টেরই পেল না। সে দ্রুত ওজু করে ফজরের নামাজ পরে নেয়। ভাগ্যিস মিরাজ ও খালিদ না ডাকলে হয়তো নামাজ পরা হতো না। সোহান নামাজ শেষে মিরাজকে ডাকে। মিরাজ ও খালেদ দৌড়ে আসে। স্যার বলুন আপনার কি লাগবে?

সোহান খেয়াল করে তার হাতের ক্ষ*তস্থানটি সম্পূর্ণ ভাবে ভালো হয়ে গেছে। এটা দেখে সোহান খুবই অবাক হয়। সে ভাবছে তাহলে সে স্বপ্নে যে মেয়েটিকে দেখেছিল সে কে ছিল! আচ্ছা মিরাজ আমাকে একটা সত্যি কথা বলো। ফুল বাগানের ঐ পাশে নিষিদ্ধ স্থানে আসলে কি আছে? খালেদ বলে স্যার আপনি যা জিজ্ঞেস করেছেন তা আর জিজ্ঞেস করবেন না। স্যার আপনার আমরা আপনার পায়ে ধরি। ভূলেও আর দ্বিতীয় বার আমাকে এটা জিজ্ঞেস করবেন না। সোহান বলে কেন? ঐ জায়গাটাতে কি সমস্যা আছে। আমাকে বলো নয়তো আমি তোমাদের দুজনকেই বলতেই খালেদ বলতে থাকে স্যার আমরা পেটের দায়ে এখানে কাজ করি। আপনি আমাদের এভাবে ক্ষতি করতে পারেন না। সোহান কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করে এবার তো বলো।

মিরাজ বলে স্যার ফুলবাগানের ঐ নিষিদ্ধ এরিয়াটুকুতে ভয়ঙ্কর এক জায়গায় যাওয়ার গুপ্ত পথ আছে। আর শুনেছি সেটা নাকি আমাদের থেকে একেবারে আলাদা জগত। সোহান অবাক হয়ে মিরাজের কথা শুনছে। বলো কি এসব! দেখো মিরাজ তুমি যা কিছু বলছো তা কি স্বজ্ঞানে বলছো? মিরাজ বলে স্যার আমি এখন যা কিছু বলছি সবই সত্যি। তবে স্যার সেখানে মানে সেই নিষিদ্ধ এরিয়া থেকে গুপ্ত পথ ধরে যে কেউ চাইলেই সেই অন্য জগতে যেতে পারবে না। কেননা সেখানে খুবই ভয়ঙ্কর আর শক্তিশালী একটি জিনিস আছে। যা এতোদিন ঘুমন্ত ছিল। কিন্তু স্যার গতকাল আপনি সেখানে গিয়ে সেই ভয়ঙ্কর শক্তিটাকে জাগিয়ে তুলেছেন। আর যতোদিন না সেই অশুভ ও ভয়ঙ্কর শক্তিটাকে পরাস্ত না করা হচ্ছে, ততোদিন সে মৃত্যু খেলায় মেতে উঠবে। সোহান কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে এখন উপায়?

মিরাজ বলে স্যার আপনাকে নিষেধ করার পরও আপনি সেখানে গিয়েছেন। এখন আপনাকেই একটা কিছু করতে হবে। সোহান বলে তোমরা এসব কাহিনী কার কাছে শুনেছো? খালেদ বলে স্যার আপনার সাথে রাতের বেলা যে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি ঘটেছে তা নিজের চোখে দেখার পরও আপনি এটা অবিশ্বাস করবেন। সোহান চিন্তায় পরে যায়। আচ্ছা আমাকে আরেকটা কথার উত্তর দাও। ফুলবাগানের ঐ জায়গাতে যে মেয়েটিকে দেখা যেতো সে কে ছিল? খালেদ বলে স্যার ও তো মেয়ে নয়। ঐটা একটা পরি। খালেদের কথা শুনে সোহান হা করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বলো কি এসব পরির কাহিনী তো বইয়ের মধ্যে আর নাটক সিনেমায় দেখা যায়। বাস্তবে এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই। মিরাজ বলে স্যার আপনি বিশ্বাস করেন বা না করেন সেটা আপার বেপার। কিন্তু আমরা যা বলছি তা সবই সত্যি। সোহান ভাবে এদের সাথে শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আচ্ছা ঠিক আছে এখন তোমরা যেতে পারো। সেদিন বাগানে অনেক ট্যুরিস্ট আসে। সোহান রিসোর্টে বসে কফি পান করছে। সে রাতে দেখা স্বপ্নের সেই মহিয়সী নারীর কথা ভাবছে। কে ছিল সেই মেয়েটি! যে স্বপ্নে এসে আমাকে স্পর্শ করতে আমার হাতের কে*টে যাওয়া ক্ষ*তস্থান ভালো হয়ে গেছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। রৌদ্রোজ্জ্বল সুন্দর পরিবেশে অনেকেই ফুলবাগানের এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে। সোহান খেয়াল করে দূরে একটা বাচ্চা মেয়েকে সেই নিষিদ্ধ এরিয়াতে যেতে দেখা যাচ্ছে। সোহান চমকে উঠে। সে দ্রুত উঠে পরে। বাচ্চা মেয়েটিকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। সোহানকে কমবেশি সবাই চিনে। অধিকাংশ লোকজনই তারতার ব্লগ ভিডিও দেখেন। তাই সোহান সবার পরিচিত মুখ। তাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে ট্যুরিস্টদের মধ্যে অনেকেই তার পিছু দৌড়াতে থাকে। সবাই দৌড়াচ্ছে সোহানের সাথে একটা সেলফি তুলবে সেই আশাতে।

সে দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখে বাচ্চাটি সেখানে নেই। সোহান মন খারাপ করে মাটিতে বসে পরে। একি কিছুক্ষণ আগেই তো সে একটা বাচ্চা মেয়েকে এখানে দেখেছিল। হঠাৎই বাচ্চা মেয়েটি কোথায় নাই হয়ে গেল! তখনই একটি মেয়ে তার সামনে দাড়িয়ে সেলফি তুলতে শুরু করে দেয়। আর ঠিক তখনই সোহান খেয়াল করে বাচ্চা মেয়েটি নিষিদ্ধ এরিয়ার ভেতর সেই বড় গাছটির নিচে দাড়িয়ে আছে। যেই মেয়েটি তার সামনে দাড়িয়ে সেলফি তুলছে, সোহান তাকে সরি বলে সেখান থেকে দৌড়াতে থাকে। ঐ তো বাচ্চা মেয়েটি গাছের দিকে তাকিয়ে আছে। গতরাতে সোহানকে এই গাছ থেকে ভয়ঙ্কর একটি লোমশ অবয়ব তাকে ধরেছিল। বাচ্চা মেয়েটি হয়তো কিছু একটা দেখেছে। আর হয়তো সেজন্যই সে এখানে এসেছে। বাচ্চা মেয়েটি যা দেখছে তা হয়তো অন্য কেউ দেখছে না।

সোহান দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে ধরে ফেলে। তখনি সেখানে হঠাৎই ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। যা দেখে সেখানে থাকা সবাই দৌড়ে বাগান থেকে বের হতে থাকে। সোহান বাচ্চা মেয়েটিকে কোলে নিয়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালাতে থাকে। মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোনো শক্তি সোহানকে পেছন থেকে তাড়া করছে। সোহান যেন সামনে এগোতে পারছে না। হঠাৎই কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাকে সামনে এগোতে সাহায্য করে। সোহান রাতে দেখা মেয়েটির উপস্থিতির সময় যেমন সুন্দর মিষ্টি গন্ধ পেয়েছিল। এখনও সে একই গন্ধ পাচ্ছে। সে ভাবে তাহলে কি সেই রাতের দেখা মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে আমাকে সাহায্য করছে। সোহান চিৎকার করে বলতে থাকে আমি জানি তুমি আমার আশেপাশেই আছো। ঠিক এসময় তুমি আমাকে সাহায্য করছো। তুমি যেই হও না কেন, তোমাকে ধন্যবাদ। আর তখনই সে লোকালয়ে চলে আসে। সবাই দৌড়ে সোহানের চারপাশে ভির করে।

অনেকেই তো সোহানকে ভিডিও করতে থাকে। পাশ একটি মহিলা সোহানের কাছে গিয়ে বলতে থাকে ভাইয়া আপনি মানুষ নয়। আপনি আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়েছেন। সোহান মহিলাটির দিকে তাকিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলতে থাকে আপনি কেমন মা, যে সন্তানকে জন্ম দিয়েছেন সন্তানের খেয়াল রাখতে পারেন না। আর আপনার একটু বে_খেয়ালিপনায় আপনার বাচ্চা মেয়েটি ..! থাক এখন থেকে বাচ্চার খেয়াল রাখবেন। যদি বাচ্চাটির কিছু হয়ে যেতো তাহলে তার বাবাকে কি জবাব দিতেন আর নিজেও কিভাবে সন্তানকে হারিয়ে ঘরে ফিরতেন। সোহানের কথা কথাগুলো শুনে সবাই অবাক হয়। এতোদিন তো সবাই তাকে একজন ব্লগার হিসেবেই দেখেছে। কিন্তু সোহান যে এতো ভালো একজন মানুষ, তা দেখে সবাই অবাক হয়। বাচ্চা মেয়েটি তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তখনি সেখানে মিরাজ ও খালেদ বলতে থাকে স্যার আপনার কিছু হয়নি তো।

সোহান বলে না আমি একদমই ঠিক আছি। মিরাজ ও খালেদ সোহানকে সাথে নিয়ে রিসোর্টে ফিরে। আসার সময় সে আশেপাশে সেই মেয়েটিকে খুঁজে। কিন্তু মেয়েটিকে কোথাও দেখা যায়নি। সেদিনের মতো বাগানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। একটু আগেও পুরো বাগানজুড়ে লোকজনে ভরপুর ছিল। খানিক সময় যেতেই পুরো বাগান খালি হয়ে গেলো। খালেদ ও মিরাজ বলে স্যার আপনার কিছু লাগলে আমাদের জানাবেন কিন্তু। সোহান বলে আচ্ছা ঠিক আছে এখন তোমরা যেতে পারো। তখনই তার মায়ের ফোন আসে। ফোন রিসিভ করেই সোহান সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে আম্মু তুমি কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ বাবা আমি ভালো আছি। তোর হাতে কে*টে যাওয়া ক্ষতস্থান কি আগের চেয়ে ভালো হয়েছে? সোহান বলে__আম্মু তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমার হাতের ক্ষতস্থান পুরোপুরি ভালো হয়ে বলতে বলতে হাতের দিকে তাকাতেই সে দেখে তার হাতের ক্ষত আগের মতোই আছে।
__কি হলো বাবা কথা বলছিস না যে..!
__কিছু না আম্মু আমি ভালো আছি।
সোহান ভাবে এটা কিভাবে সম্ভব! আমার হাতের ক্ষতস্থান তো গতরাতে পুরোপুরি ভালো হয়ে গিয়েছিল। তাহলে এখন সেটা আবারো আগের মতোই হয়ে গেল কিভাবে!
__কি হলো বাবা তুই কিছু বলছিস না যে..
__না আম্মু আমি একদম ঠিক আছি। আব্বু কেমন আছেন?
__তোর আব্বু ভালো আছে। তুই সাবধানে থাকিস বাবা।
__ঠিক আছে আম্মু। আমার সাথে তোমার দোয়া আছে না। আমার কোনো চিন্তা নেই। আমার আম্মুর দোয়া থাকতে আমি কোনো চিন্তা করি না।

__সোহান বাবা শোন তোর জন্য যে মেয়েটিকে পছন্দ করেছিলাম। আজ মেয়েটি আমাদের বাসায় এসেছিল। আহা কতো মিষ্টি দেখতে মেয়েটি। করো কতো সুন্দর তার আচার আচরন। তোর আব্বুও মেয়েটিকে দেখে ঠিক করেছে, এই মেয়েকেই তোর বউ করে ঘরে আনবে।
__আচ্ছা আম্মু আমি এখন রাখছি তুমি নিজের খেয়াল রেখো। বলেই সে কল কেটে দেয়।
হাতের ক্ষ*তস্থানে তাকিয়ে সোহান ভাবে এটা কিভাবে সম্ভব! গতরাতে তো তার হাত ঠিকই ছিল। হঠাৎই আবারো এমন হয়ে গেল কিভাবে! তার কপালে চিন্তার ভাজ। আচ্ছা কোথাও মিরাজ ও খালেদের কথা সত্যি নয়তো। নিষিদ্ধ জায়গাতে কি আছে! সেখানে কি সত্যিই অন্য জগতে যাওয়ার কোনো পথ আছে। আর সেই মেয়েটিই বা কে! যে রাতের বেলা তার স্বপ্নে এসেছিল। তার হাতে স্পর্শ করতেই তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল।

এই চিন্তায় দুদিন যাবত কোনো ভিডিও ধারন করেনি। সে খালেদকে ডাকলে মিরাজ ও খালেদ আসে। আচ্ছা আমি যখনই তোমাদের একজনকে ডাকি, তখন একজন না এসে দু্জনই কেন আসো? মিরাজ বলে একি স্যার আপনি এটা কি বলছেন। আপনি আমাদের ভিআইপি ট্যুরিস্ট। আমরা দুজন সবসময়ই ভিআইপি ট্যুরিস্টদের স্পেশাল সেবা করে থাকি। কখন কি লাগে তা তো বলা যায় না। তাইতো আপনার ডাকে আমরা দুজনই চলে আসি। আচ্ছা বাদ দাও। এখন আমাকে এই বাগান সম্পর্কে আমাকে কিছু তথ্য দাও। যা বলবে তা কিন্তু সত্য বলবে আমি সবকিছুর ডকুমেন্ট সংগ্রহ করছি। এটা নিয়ে আমি একটা ব্লগ বানাবো। তাই তোমাদের থেকে যা জানতে চাইবো তা সঠিক জবাব দেবে।

মিরাজ বলে স্যার আপনার যা জানার আছে আমাদের বলুন। আমরা সব সত্যি বলবো। আচ্ছা আমাকে এটা বলো তোমাদের এতো বিশাল বাগানে রাতের বেলা এখানে তোমরা ছাড়া আর কে কে থাকে। খালেদ বলে স্যার আমরা তো মেইন গেইটে থাকি। তাছাড়াও বাগানের ঐ পাশটাতে আরো কয়েকজন থাকে। কিন্তু কেন স্যার?__দেখো সেখানে কি কোনো মেয়ে মানুষ থাকে? মানে তোমাদের বাগানে কি কোনো মেয়ে মানুষ কর্মচারী হিসেবে আছে? মিরাজ বলে না স্যার এখানে কোনো মেয়ে মানুষ নেই। কিন্তু স্যার আপনি এটা কেন জানতে চেয়েছেন? দেখুন স্যার আপনি কি এই দুই দিনে এখানে কোনো মেয়ে মানুষ দেখেছেন? সোহান বলে এই যে দেখো তো এই মেয়েটাকে তোমরা চেনো কিনা! সোহান ভিডিও প্লে করে তাদের দেখালে তারা বলে স্যার আমরা তো কখনোই এব মেয়েটিকে দেখেনি। আপনি এই মেয়েকে কোথায় পেয়েছেন? সোহান বলে আমি এই মেয়েকে এই বাগানে দেখেছি। সোহানের কথা শুনে তারা দুজনেই ভয় পেয়ে যায়।

স্যার আপনি কি মেয়েটিকে ছেড়া আর কিছু দেখেছেন?__না তো তবে ঐ নিষিদ্ধ জায়গাতে বড় গাছটিতে লোমশ টাইপের ভয়ঙ্কর কিছু দেখেছি। স্যার মনে হয় আমরা আর এখানে বেশিদিন চাকরি করতে পারবো না। __কি বলো তোমরা! তোমাদের আবার কি হলো?__স্যার আপনি যে লোমশ ভয়ঙ্কর অবয়বটিকে দেখেছেন, সেটি কিন্তু কোনো সাধারণ কিছু নয়। সেটার পিছনে লম্বা কাহিনী আছে স্যার। সোহান জিজ্ঞেস করে আমি তোমাদের কাছে সেই লম্বা কাহিনীটা শুনতে চাই। আমি ক্যামেরা অন করছি। তোমাদের দু্জনের থেকে যে কেউ কাহিনীটা বলবে। আর সেটা আমার ক্যামেরায় ভিডিও হবে। সোহানের মুখে এই কথা শুনে দুজনেই বলে স্যার এটা আমরা বলতে পারবো না। এটা বললে আমাদের ক্ষতি হতে পারে। সোহান কিছু টাকা দিলে মিরাজ রাজি হয়। সে ক্যামেরার পিছনে গিয়ে কাহিনীটি বলতে শুরু করে।

স্যার অনেক দিন আগের কথা। এই যে বিশাল ফুলবাগানটি দেখছেন। এটা কিন্তু একসময় কোনো বাগান ছিল না। একটা সময় এখানে বিস্তির্ন মাঠ ছিল। আর এখানে ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ন ছিল। তার পাশেই ফাকা মাঠে এলাকার অনেক ছেলেপুলে খেলাধূলা করতো। কিন্তু কেউই ভূলেও এই ঝোপঝাড়ে প্রবেশ করেনি। কিন্তু একদিন একটা ছেলে কোনো কারনবসত সেই ঝোপঝাড়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ছেলেটি দেখতে পায় ঝোপঝাড়ের ভেতর সুন্দরী একটি মেয়ে কি যেন খুঁজতেছে। ছেলেটি মেয়েটির পিছু নেই। কিন্তু হঠাৎই মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর থেকে ছেলেটি যখনই সেই মাঠে যায়। সে সবার অজান্তে সেই ঝোপের ভেতরে প্রবেশ করে। আর দিক_বিদিক মেয়েটিকে খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু সে আর কোনোদিনই মেয়েটিকে সেখানে দেখতে পায়নি। এদিকে ছেলেটি প্রতিনিয়ত সেখানে বিচরন করতে থাকে। আর একদিন ছেলেটি সেখানে কাওকে সেখানে দেখতে পায়। সে ভাবে এই তো আজ সে মেয়েটিকে খুঁজে পেয়েছে। সে দ্রুত সেখানে গিয়ে মেয়েটির পেছনে গিয়ে দাড়ায়।

আর আস্তে করে বলতে থাকে এই যে সুন্দরী তুমি এখানে লুকিয়ে আছো। আর এদিকে তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমি ক্লান্ত। এই যে সুন্দরী তুমি এখানে কি করছো? এই বলে সে মেয়েটির একটা হাত ধরে। আর তখনি চারপাশে ঝড়ো হাওয়া বয়তে শুরু করে। মনে হচ্ছে সবকিছু উড়িয়ে নিতে যাবে। মেয়েটি দেখতে দেখতে তার সামনে শূন্যে ভাসতে থাকে। ছেলেটি ভয়ে সেখান থেকে দৌড়াতে থাকে। আর তখনি মেয়েটি তাকে ধরতে যায়। কিন্তু ছেলেটি ভয়ে পালাতে থাকে। আর হঠাৎই ছেলেটিকে পেছন থেকে লোমশ কিছু একটা ধরে ফেলে। ছেলেটি পেছনে তাকাতেই দেখে লোমশ টাইপের ভয়ঙ্কর একটি অবয়ব তাকে শক্ত করে ধরে আছে। ছেলেটি কিছু বলার আগেই মুহুর্তের মধ্যেই ভয়ঙ্কর সেই অবয়বটি ছেলেটিকে মে*রে ফেলে। আর সেদিনের পর থেকে সেই জায়গাটি চারপাশ থেকে বন্ধ করে রাখা হয়। কেউই সেই জায়গাটির আশেপাশে যায় না।

এতো বিশাল জমির মালিক পরিত্যক্ত জায়গাটি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে। সে বিশাল জায়গাটুকু একটু সস্তা দামে বিক্রি করার অফার দেয়। আগন্তুক একজন লোক সেই জমিটুকু ক্রয় করে। সে পুরো জায়গাটা পরিষ্কার করে। লোকটি চিন্তা করে এখানে কি করলে সে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তার কথামতো সেখানে ফুলের বাগান করা হয়। চারপাশে বিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হয়। আস্তে আস্তে সেখানে লোকজন দেখতে আসে। কিন্তু স্যার কিছুদিন গেলে সেখানে একটা সমস্যা দেখা দেয়। কয়েকজন কেয়ারটেকারকে সেখানে রাখা হয়। সেখানে যে কয়জন লোক কাজ করতো সবাই রাতে বাগানের পাশেই অবস্থান করতো। তারপর থেকে বাগানে প্রায় রাতেই সুন্দরী মেয়েকে ঘুরতে দেখা যেত। কেউ তো সুন্দরী মেয়েটির পিছু নিয়েছিল। কিন্তু স্যার সমস্যা হয় তখন যখন অনেকেই বাগানটিতে সুন্দরী মেয়েটিকে ছাড়াও আরেকটি ভয়ঙ্কর লোমশ অবয়বকে দেখতে পায়। তখন রাত হলেই সবাই ভয়ে ভয়ে থাকে।

একবার তো স্যার একটা লোক মেয়েটির পিছু নিতে নিতে সেই নিষিদ্ধ এরিয়াতে চলে যায়। কিন্তু স্যার জায়গাটি তখন নিষিদ্ধ ছিল না। সেই জায়গাতে গেলেই লোমশ কালো অবয়বটি লোকটিকেও মে*রে ফেলে। লোকটির মৃত্যুতে বাগানের সকল কর্মচারী কাজ ছেড়ে চলে যায়। তারপর মালিক বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে। কি করা যায় এখন। এতো বিশাল জায়গা তো এমনিতে ফেলে রাখা যায় না। সে একজন তান্ত্রিকের সরনাপন্ন হয়। তান্ত্রিক পুরো বাগানটি ঘুরে দেখে। সে বলতে থাকে মালিক আপনার এই বাগানে অনেক কিছুই আছে। সেটা ভালো আর খারাপ মিলিয়ে আছে। মালিক বলে এখন কি করা যায়। তান্ত্রিক বলে মালিক আপনার বাগানে যে ভয়ঙ্কর অভিশপ্ত শক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তা কিন্তু সাধারন কোনো অপশক্তি নয়। মালিক জিজ্ঞেস করে আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন?

তান্ত্রিক বলে মালিক আপনার বাগানে ভয়ঙ্কর কিছু অভিশপ্ত জিনিস ঘুরে বেড়ায়। যাদের থামানো আমার পক্ষে সম্ভব না। কেননা আমি যতোদূর আন্দাজ করতে পেরেছি। এখানে ভিন্ন জায়গার কোনো অশুভ শক্তি আটকে আছে। যা পুরো বাগানজুড়ে বিচরন করে। মালিক বলে তাহলে আপনি একটা কিছু করেন। যতো টাকা লাগে আমি দেবো। তান্ত্রিক বলে__ মালিক এখানে টাকাটা বড় নয়। আমি অনেকদিন যাবত এই পেশায় আছি। কোনোদিনও এইরকম দেখিনি। ভিন্ন জগতের কোনো অপশক্তি দেখিনি। মালিক আমি শুধু এটাকে আপনার বাগানের যেকোনো এক প্রান্তে আবদ্ধ করে রাখতে পারি। যেখানে তারা সবসমই সেই জায়গাটে থাকবে।
__ঠিক আছে আপনি তাহলে তাই করুন। তান্ত্রিক তার কাজ শুরু করে দেয়। রাতের বেলা পুরো বাগান ঘুরে সেই অশুভ শক্তিটি বড় বড় গাছের এখানে গিয়ে থামে। অনেক চেষ্টার পরও সেখান থেকে সেটাকে সরানো যায়নি।

তান্ত্রিক সেটাকে তাড়াতে গেলে ব্যর্থ হয়। আর তখন তান্ত্রিক নির্দিষ্ট একটা জায়গা জুড়ে চারপাশে বালি ছিটিয়ে দেয়। সে মালিককে বলে আপনার পুরো বাগানে এই জায়গাটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নয়তো যে কেউ এখানে আসলে সেটা কিন্তু আবারো মুক্ত হয়ে যাবে। আর সেটাকে যে বা যারা একবার মুক্ত করবে তার মৃত্ু নিশ্চিত। কেননা ভয়ঙ্কর সেই অভিশপ্ত শক্তিটি একবার মুক্ত হয়ে গেলে সে তার শিকারকে শেষ না করা পর্যন্ত শান্ত হবে না। মিরাজের মুখে এই কথা শুনে সোহান ভয় পেয়ে যায়। বলো কি তুমি! এগুলো কি আসলেই সত্যি? মিরাজ বলে স্যার আমি যা বলছি সবই সত্য বলছি। সোহান জিজ্ঞেস করে তারপর কি হলো? মিরাজ আবারো বলতে থাকে। ___স্যার তান্ত্রিক তো বাগানে থাকা খারাপ অশুভ শক্তিটিকেই বন্দী করেছে। কিন্তু সেখানে ভালো একটা অদৃশ্য শক্তি বিরাজ করতো। যা অনেকেই ভিন্ন সময়ে দেখেছে। কিন্তু কেউই সাহস পায়নি সেটার ধারে কাছে যেতে। তারপর থেকে সেই জায়গাটুকু নিষিদ্ধ করা হয়।

সোহান মিরাজকে থামিয়ে বলে আচ্ছা সেটাই কি এই মেয়েটা যে বাগানে এখনো ঘুরে বেড়ায়। মিরাজ বলে হ্যাঁ স্যার। আর আমি যতোদূর শুনেছি এই মেয়েটি নাকি মানুষ নয়। সোহান মিরাজকে জিজ্ঞেস করে তাহলে মেয়েটি কে? মিরাজ বলে স্যার লোকমুখে শুনেছি মেয়েটি নাকি পরি। কেউ বলে মেয়েটি নাকি কোনো আত্না। তবে স্যার আমি এই বাগানে দীর্ঘদিন যাবত আছি কিন্তু কোনোদিনই মেয়েটিকে দেখিনি। সোহান জিজ্ঞেস করে আচ্ছা সেই ভয়ঙ্কর অশুভ শক্তির সাথে মেয়েটির কি সম্পর্ক? মিরাজ বলে স্যার আমি সেটা বলতে পারছি না। তবে সেই তান্ত্রিক কিছুদিন গেলেই মারা যায়। তারপর অন্য একটা তান্ত্রিক নিয়ে আসলে সে বলে এই অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করতে তার নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হবে। মিরাজ বলে স্যার আমি যতোটুকু জানি ততোটুকু বলেছি। আমি এর থেকে বেশি কিছু জানি না।

সোহান বলে আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো সেদিন আমাকে যেই লোমশ অবয়বটি ধরেছিল, সেটাই কি সেই অভিশপ্ত অশুভ শক্তি? মিরাজ বলে স্যার আপনি বিপদের মধ্যে আছেন। আপনি সেই বন্দী থাকা অশুভ ও অভিশাপ শয়তানটিকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন সেটা শুধু বাগান নয় যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারবে। কে জানে এর পরবর্তী শিকার কে হতে পারে। সোহান অবাক হয়ে ভাবে সর্বনাশ এ আমি কি করে ফেললাম। আমার কারনে একটা অশুভ ও অভিশপ্ত ভয়ঙ্কর শয়তান মুক্ত হয়ে গেল। সে চিন্তায় পরে যায়। স্যার আপনি কিন্তু বড় বিপদে পরতে যাচ্ছেন। আপনি যতো দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যান। আমরা চাইনা আপনার মতো ভালো সৎ একজন লোক মারা যাক। স্যার আপনি যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যান।
চলবে…

কপিরাইট: গল্পটির সমস্ত লেখায় লেখকের নিজস্ব লেখা। লেখকের কাছে সমস্ত লেখা নিজের সন্তানের মতো। তাই গল্পটি অন্য কোথাও শেয়ার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

গল্প : পরিমিতা (দ্বিতীয় পর্ব)
লেখক : আনোয়ার হোসেন (ভৌতিক গল্প) 
أحدث أقدم