রুম নাম্বার ৩০১
রাজু সবে মাত্র বিয়ে করেছে। কিছুদিন পূর্বে শহরে তার ভালো একটা চাকরি হয়েছে। তার স্ত্রী দেখতেও অনেক সুন্দরী। তার স্ত্রীর নাম নিলা। কিছুদিন যাবত তাদের সংসার ভালোভাবেই চলে।রাজু নিলা কে নিয়ে শহরের নতুন বাসায় উঠেছে।হঠাৎ একদিন নিলা খুবই অসুস্থ হয়ে পরে।রাজু তখন অফিসে।নিলা রাজুকে কল দিয়ে অসুস্থতার বিষয়ে সবকিছু খুলে বলে।রাজুও তরিঘরি করে বাসায় ফিরে।নিলা বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে।
রাজু নিলাকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিল। তারা হাসপাতালে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাজু হাসপাতালে গিয়ে দেখে তেমন একটা লোকজন নেই। সে ভাবে হয়তো সরকারী ছুটির দিন, তাই হয়তো লোকজন কম। নিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রিসিপশন থেকে তাদেরকে ৩০১ নাম্বার রুমে পাঠানো হয়। রাজু সাথে দুর্জন নার্স নিয়ে নিলাকে হাসপাতালের তিন তলায় ৩০১ নাম্বার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
রুমটিতে ডুকেই রাজু খেয়াল করে রুমটি স্যাতসেতে হয়ে আছে। পুরো রুম জুরেই মাকড়সা জাল বানিয়ে রেখেছে। হাসপাতালের এই সিট গুলো এত নোংরা কেন? নিলাকে সিটে শুইয়ে দিয়ে নার্স দুইটা চলে যায়। নিলা বিছানায় শুয়ে রাজুর একটা হাত ধরে রাখে। তখন একটা টিকটিকি নিলার গায়ে উঠে পরে। নিলা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। রাজু টিকটিকি টাকে দূরে ফেলে দিয়ে বলতে থাকে, এইসব মহিলাদের চাকরিতে রেখেছে কারা! হাসপাতালেও টিকটিকি, তেলাপোকা। রাজু খেয়াল করে সেই রুমের ভেতরে কিছু অংশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা আছে।
সে আরেকটি বিষয় খেয়াল করে হাসপাতালে লোকজন একেবারেই কম। সরকারি ছুটি থাকলেও এতো কম লোক তো থাকার কথা না। রুমটিতে ধুলোবালি লেগে আছে। রাজু বলে নিলা তুমি একটু থাকো। আমি দেখি কাওকে পাই কিনা। এই বলে রাজু সেই রুম থেকে বেরিয়ে পরে। আশেপাশে খুঁজলে সে কাওকেই পায়নি। একসময় সে রিসিপশনে গিয়ে সেই নার্সটিকে বিস্তারিত বলে। নার্সটি বলে ঠিক আছে। আপনি যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোক চলে যাবে। রাজু দৌড়ে ৩০১নাম্বার রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে নিলা যন্ত্রনায় ছটফট করছে। নিলা বলে তুমি আমাকে একা ফেলে কোথায় গিয়েছিলে?রাজু বলে নাতো সামনেই ছিলাম আমি।
নিলা বলে আমার না এখানে খুব ভয় করছে।এই রুমটি কেমন যেন...! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। রাজু বলে আরে নিলা তুমি ভয় পেওনা। আর কোনো চিন্তাও করো না। আমি আছি তো। নিলা বলে তুমি আমার পাশে বসে থাকো।কোথাও যাবে না তুমি। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন বয়স্ক মহিলা এসে রুমটি পরিষ্কার করে চলে যায়। রাজু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সব রুমই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। শুধু ৩০১ রুমটিই নোংরা হয়ে আছে। রাতে একজন ডাক্তার এসে কিছু ওষধ_বড়ি দিয়ে যায়। নিলাকে ওষুধ বড়ি খাইয়ে সে বিছানার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দেখে তার ফোনটি চার্জ নেই। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে সেখানেই দেয়ালে হেলান দিয়েই বসে ঘুমিয়ে পরে।
নিলাও একটাসময় ঘুমিয়ে পরে। মাঝরাতে নিলা শুনতে পায় একটা বৃদ্ধা মহিলা কান্না করছে। নিলা চোখ খোলেই তার পায়ের কাছে একটা মহিলাকে দেখতে পায়। মহিলাটি তার একটা পা ধরে টানছে। মহিলাটি দেখতেও খুব ভয়ানক লাগছে। নিলা চিৎকার করতে থাকে।সাথে সাথে চিৎকার শুনে রাজুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাজু জেগে উঠার পর দেখতে পায়, নিলা কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। রাজু জিগ্যেস করে, এই নিলা। নিলা তোমার কি হয়েছে? নিলা বলে তাকে নাকি একটা মহিলা পা ধরে টানছিল। মহিলাটা খুবই ভয়ানক লাগছিল।
রাজু হাসে আর বলতে থাকে কোথায়? এখানে তো কেউই নেই। তুমি হয়তো কোনো স্বপ্ন দেখেছো। নয়তো এটা তোমার মনের ভূল ছিল। নিলা বলে না এটা আমি স্বপ্ন দেখিনি।কিছুক্ষণ আগেই এখানে একটা মহিলা ছিল।রাজু বলে তুমি ভয় পেওনা না।আমি তো আছি তোমার সাথে। সে রুমটা ভালো করে খুজে দেখে, কোথাই আশেপাশে তো কাওকে দেখছি না। এখন ঘুমাও। নিলা ভয়ে ভয়ে শুয়ে আছে। রাজু নিলার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। একসময় দুজনই ঘুমিয়ে পরে। পরদিন সকাল বেলা দরজায় কে যেন নক করে। রাজু উঠে দরজা খোলে।
রুম ঝাড়ু দিতে একটা মহিলা এসেছে। মহিলাটি রুম ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়। রাজু বলে তুমি একটু বসো। আমি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসি।নিলা বলে না। আমি এখানে একা থাকতে পারবো না।। নিলাকে অনেক বুঝিয়ে ৩০১ নাম্বার সেই রুম থেকে রাজু বেরিয়ে পরে। বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসার সময় রাজুর চোখ যায় তিনতলার সেই ৩০১ নাম্বার রুমটির দিকে।রাজু দেখে সে রুমের বাহিরে একটা বুড়ো মহিলা দাড়িয়ে রুমের দিকে উকি দিচ্ছে। রাজু কিছুটা অবাক হয়ে দৌড়ে তিনতলায় যায়। সেই রুমের আশেপাশে অনেক খুজেও মহিলাটিকে কোথাও দেখা গেল না। সেই মহিলাটিকে আশেপাশে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজু রুমে প্রবেশ করে দেখে নিলা কেমন যেন করছে। একি কিছুক্ষন আগেও তো নিলা সুস্থ ছিল। তাহলে এই অল্প সময়ে তার কি হয়ে গেল। রাজু নিলাকে বার বার ডাকতে থাকে। কি হয়েছে তোমার? এই নিলা চোখ খোলো। কি হয়েছে তোমার। একসময় নিলা অচেতন হয়ে পরে।রাজু দৌড়ে ডাক্তার আনতে যায়। ডাক্তার নিয়ে আসলে রাজু নিলাকে দেখে খুবই অবাক হয়।রাজু দেখে, নিলা একদম সুস্থ আছে। সে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। ডাক্তার নিলাকে দেখে বলে আপনার রোগি তো সুস্থ। একথা বলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।
রাজু খুবই অবাক হয়।এইতো কিছুক্ষণ আগেই তো নিলা বিছানায় কিরকম যেন করছিল। একসময় সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাহলে এতো তারাতারি কি করে নিলা সুস্থ হয়ে গেল!! সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। যদি তখন নিলা ওয়াশরুমেই যেয়ে থাকে,তাহলে কিছুক্ষণ আগে এই বিছানায় কে শুয়ে ছিল? এটা ভেবেই রাজু অবাক হয়। তাহলে কি ছিল সেটা! এমনিতেও রাজু পেরানরমাল কোনো বিষয়ে বিশ্বাস করেনা। কিন্তু আজ তার সামনে যা ঘঠেছে। তার কি হবে।
নিলা বলে কোথায় তুমি না খাবার আনতে গিয়েছিলে। কোথায় খাবার? রাজু বলে এইতো খাবার। ঠিক আছে তুমি খেয়ে নাও। আমি খাব না বলে রাজু আাশেপাশে সেই মহিলাটিকে অনেক খুজে। কিন্তু মহিলাটিকে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি। বিকেলবেলা নিলা আবারো অসুস্থ অনুভব করে। তাই সেদিন আর তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেনি। সন্ধ্যা বেলা রাজু আবারো খাবার আনতে বাহিরে যায়। খাবার নিয়ে আসার সময় রাজু দেখে,কয়েকজন লোক একটা বৃদ্ধা মহিলাকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। মহিলাটির দিকে তাকিয়ে তো রাজু সত্যিই অবাক হয়।আরে এই মহিলাটিই তো গতকাল নিলার রুমে উকি দিয়েছিল।
রাজু মৃত মহিলাটির সাথে থাকা লোকজনকে জিগ্যেস করে।কে এই এই মহিলা?আর ইনি কবে মারা গেল? লোকগুলোর কথা শুনে রাজুর চোখ কপালে উঠে যায়।লোকগুলো বলে কিছুদিন আগে রোড এক্সিডেন্টে এই মহিলাটি মারা যায়।
রাজু খুবই অবাক হয়।যদি এই মহিলাটি কিছুদিন আগেই মারা যেয়ে থাকে,তাহলে গতকাল সে ৩০১নাম্বার রুমের সামনে কাকে দেখেছিল!রাজু সেখান থেকে দৌড়ে তিনতলায় নিলার কাছে যায়।রুমে প্রবেশ করে দেখে নিলা শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।
রাজু খেয়াল করে রুমের ভেতর একপাশে সাদা কাপড় দিয়ে কি যে ঢেকে রাখা আছে। রাজু দেখে সাদা কাপড়টি দু পাশ থেকে ঝুলে আছে।সাদা কাপড়ের ঝুলানো অংশ এখনো নড়ছে। এটা দেখে সে কিছুটা অবাক হয় ও ভয় পায়।এই রুমটিতে তো এই সাদা কাপড়টি আগে ছিল না। আগে কখনো তো এই সাদা কাপড়টি দেখিনি।সে উঠে দাড়ায়। ভয়ে ভয়ে সে সেই কাপড়টির কাছে যেতে থাকে। এক পা দুই পা করে সামনে এগোচ্ছে। রাজু সেখানে গেলে কাপড়টি সরাতেই সে খুবই ভয় পেয়ে যায়। সে দেখে সেই বৃদ্ধা মহিলাটি ঘুমাচ্ছে। বৃদ্ধা মহিলাটির চোখ দুটো নেই।
তাই বোঝা যাচ্ছে না যে,মহিলাটি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে। মহিলার মুখ দিয়ে র,ক্ত বের হচ্ছে। রাজু এটা দেখে এতো বেশি ভয় পায়। সর্বনাশ!!! কিছুক্ষণ আগেইতো সে এই মহিলাটিকে মৃত দেখেছে। এইতো কিছুক্ষণ আগেই কয়েকজন লোক ধরাধরি করে বৃদ্ধা মহিলার লাশটি নিয়ে গেল।তাহলে এই মহিলাটি???ঠিক তখনই রাজুর কাধে কে যেন স্পর্শ করে। রাজু ভয় গেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে সেই ভয়ানক চেহারার মহিলাটি দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ দুটো নেই। তবুও বোঝা যাচ্ছে রাজুর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে র,ক্ত বের হচ্ছে। খুবই ভয়ানক লাগছে মহিলাটিকে।রাজু ভয়ে চিৎকার দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যায়।তখন সে খেয়াল করে বিছানায় নিলা নেই।আরে কিছুক্ষণ আগেই তো নিলা এখানে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল।রাজু দেখে ভয়ানক সেই মহিলাটি তার দিকেই আসছে।রাজু ভয়ে দৌড়ানো চেষ্টা করে।কিন্তু সে কিছুতেই নড়তে পারছে না।মনে হচ্ছে। কেউ যেন তার পায়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে।ঠিক সেইসময় তার কাধে কে যেন হাত রাখে।সে ভয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নিলা দাড়িয়ে আছে।
রাজু বলতে থাকে তুমি ???নিলা বলে কেন? আমাকে দেখে তুমি এমন করছো কেন?রাজু জিগ্যেস করে তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?নিলা বলে আমি একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।রাজু অনেক ভয় পেয়েছে।যে কোনোভাবেই এসব বিশ্বাস করতো না। আজ নিজের চোখে কতো ভয়ানক মহিলাটিকে দেখলো।যা কিছুই ঘটলো সবই তার নিজের চোখের সামনেই। রাজু বলে তুমি কি কিছু দেখেছো বা শুনেছো?
নিলা বলে কই নাতো কিছুই দেখি নি আমি। সে বলে এখানে আর থাকা যাবে না। কাল সকালেই আমরা এখান থেকে চলে যাবো। এখানে আসার পর থেকে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। নিলা বলে সেদিন তো আমি তোমাকে বলেছিলামই যে সেদিন রাতে একটা ভয়ানক মহিলা আমার একটা পা টান দিয়েছো ধরেছিল। তুমি তো আমার কথা বিশ্বাসই করলে না।রাজু বলে শুধু আজকের রাতটা। না না আজ রাত এখানে থাকা যাবে না। যদি রাতে কোনোকিছু ঘটে যায়।সেটা ভেবে রাজু নিলাকে নিয়ে বের হয়ে যায়।
কিন্তু রিসিপশনে এসে দেখে হাসপাতালের মেইন গেইট তালা দেওয়া। ততক্ষণে অনেক রাত হয়ে গেছে। মেইন গেইটে কাওকে দেখাও যাচ্ছে না। চারদিকে তাকিয়ে রাজু বলে এখানে তো দেখছি সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। চারপাশটা কেমন যেন ভূতুরে একটা পরিবেশ। এতটুকু ভয় ও লাগছে রাজুর। দুজনে আবারো সেই ৩০১ নাম্বার রুমে চলে যায়। সেখানে বসে নিলা ও রাজু গল্প করছে। একটা সময় তারা দুজন ঘুমিয়ে পরে।হঠাৎই রাজুর ঘুম ভাঙ্গে। রাজু চোখ মেলে তাকাতেই দেখে,সে বিছানায় নেই!! রাজু এখন সেই রুমের একপাশে রাখা সাদে কাপড়ের নিচে শুয়ানো অবস্থায় রয়েছে।
শরীরের উপড় থেকে কাপড়টি সরাতেই রাজু দেখতে পায়,সেই ভয়ানক দেখতে অবয়ব টি বিছানায় শুয়ে আছে। মানে রাজুর জায়গাতে সেই মহিলাটি শুয়ে আছে। আর রাজু সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা স্থানে শুয়ে আছে। রাজু দেখে মহিলাটি শুয়ে শুয়ে তার দিকে ভয়ানক ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বৃদ্ধা মহিলাটির মুখ থেকে র,ক্ত ঝড়ছে।ইস্্্ কি বিভৎস দেখতে।হঠাৎ তার নিলার কথা মনে পরে। সে উঠে দাড়ায় আর দেখে নিলা আশেপাশে কোথাও নেই। রাজু ভাবে এর আগের বার তো নিলা ওয়াশরুমে ছিল। হয়তো এইবারো নিলা ওয়াশরুমে আছে। কিন্তু রাজু ওয়াশরুমে গিয়ে নিলাকে পায়নি।
সে দেখে,ভয়ানক মহিলাটি আস্তে আস্তে উঠে দাড়াচ্ছে। এটা দেখে রাজু দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।বাহিরে শুধু অন্ধকার। একি কিছুক্ষণ আগেও তো পরিবেশটা আলোকিত ছিল। হতে পারে বিদ্ুৎ নেই। রাজু দেখে ভয়ানক মহিলাটি আস্তে আস্তে তার দিকে আসছে। এক পা দু পা করে রাজু পিছনে যাচ্ছে। হঠাৎই কারো শরীরে তার ধাক্কা লাগে।রাজু ভয়ে চিৎকার দিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে,নিলা দাড়িয়ে আছে। নিলাকে দেখে রাজু বলে তুমি এখানে?নিলা বলে আমি তো এখানেই ছিলাম।
বিদ্ুৎ ছিল না তো তাই গরমে একটু বারান্দায় এসেছিলাম। নিলা রাজুকে এই অবস্থায় দেখে একটুও অবাক হয়নি।রাজু বলছে চলো এখান থেকে।অন্ধকারের মধ্যেই রাজু নিলার একটা হাত ধরে হাসপাতালের মেইন গেইটের দিকে দৌড়াতে থাকে।পেছন পেছন সেই ভয়ানক মহিলাটিও আসছে। রাজু ভয়ে ভয়ে দৌড়াচ্ছে। একসময় সে খেয়াল করে, তার কাছে নিলার হাতটা অনেক শক্ত লাগছে। অনেকটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।সে নিলার দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। সে এখন ভয়ঙ্কর সেই মহিলাটিকে ধরে আছে।মানে এতক্ষণ যাবত রাজু নিলা ভেবে যার হাত ধরে দৌড়াচ্ছিল,সে নিলা না। তাহলে নিলা গেল কোথায়।
হঠাৎই তিনতলার সেই ৩০১নাম্বার রুম থেকে নিলার গলার আওয়াজ পায়। রাজু নিলাকে ডাকলে, নিলা বারান্দায় এসে দাড়ায় ও রাজুর দিকে ফিরে তাকায়। রাজু জিগ্যেস করে, তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?নিচে আসো জলদি।নিলা উপর থেকে সাড়া দেয়।আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম। তুমি নিচে কি করছো? এখন কথা বলার সময় না। তারাতারি নিচে আসো।এ জায়গাটা ভালো না। ততক্ষণে সেই ভয়ানক মহিলাটা রাজুর কাছেই চলে আসে। রাজু দৌড়ে রিসিপশনের কাছে যায়। সেখানে একজন নার্স ঘুমাচ্ছে।
রাজু ডাক দিলেও সে নার্স টি জাগেনি।নিলাকে আবারো ডাকতে গিয়ে রাজু খেয়াল করে,নিলা তো মাটি থেকে কিছুটা উপরে মানে তিনতলার বারান্দায় নিলা শূন্যে দাড়িয়ে আছে।তাও নিলার পা নেই। এটা দেখেতো রাজু খুবই ভয় পায় এখন সে চিন্তা করে। এটা তো তার নিলা নয়। আর এখানে আশেপাশে কাওকেই দেখা যাচ্ছে না। সে ভাবে কিভাবে এখান থেকে একা বের হওয়া যায়। রাজু দেখে পেছনে একটা গ্লাসের জানালা আছে। সে জানমালার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ততক্ষণে নিলা ও ভয়ঙ্কর সেই মহিলাটি তার খুব কাছেই লে আসে। রাজু ভয়ে কোনোকিছু না ভেবে জানালা দিয়ে জুড়ে একটা লাফ দিয়ে রাস্তায় গিয়ে পরে। তখন রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তার ঠিক পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আহ্ বলে রাজু চিৎকার করতে থাকে।
রাজু উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে,তখনও সেই ভাঙ্গা জানালার ফাকা অংশ দিয়ে নিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলা বলছে এদিকে আসো।আমি তোমার সবকিছু ঠিক করে দিচ্ছি।সাথে সেই ভয়ানক মহিলাটিও দাড়িয়ে আছে।রাজু ভয়ে আর সেদিক ফিরে তাকায় নি। সে দেখে একটা রিক্সা আসছে। রিক্সা টিকে থামিয়ে তার বাসার দিকে যেতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে তার বাসায় পৌছে যায়। রাজু দেখে বাসায় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করা। দরজায় নক করলে, কিছুক্ষণ পর দরজা খুললে সে দেখতে পায়,রুমের ভেতর নিলা দাড়িয়ে আছে। রাজু এখানে নিলাকে দেখে জিগ্যেস করে, তুমি এখানে কি করে!
নিলা জিগ্যেস করে তুমি দুদিন কোথায় ছিলে? তোমাকে কতবার ফোনে ট্রাই করলাম।একটা বারও কল ডুকেনি। তোমার ফোনটি বন্ধ পেয়েছি। রাজু তার ফোনটি বের করে দেখে। হ্যাঁ তাইতো , তার ফোনটি আসলেই বন্ধ। সে ভেতরে প্রবেশ করে। রাজু বাসায় গোসল সেড়ে বসে আছে। এপাশেই নিলা বসে আছে।রাজু এক গ্লাস পানি পান করছে আর ভাবছে নিলা যদি বাসায় থেকেই থাকে,তাহলে এই দুদিন আমার সাথে কে ছিল? বা সেদিন বাসা থেকে নিলা মনে করে আমি কাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম ! সেটা ভূত ছিল না তো আবার!
সমাপ্ত।
গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে,তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।আপনার একটা কমেন্টই ভৌতিক গল্পকে নতুন গল্প লিখতে উৎসাহীত করবে।আর একটা কথা ,আপনার আশেপাশে পরিচিত যারা ভৌতিক গল্প পড়তে পছন্দ করে।তাদেরকে ভৌতিক গল্পে আমন্ত্রন করে গল্প পড়ার সুযোগ করে দিন।যাতে তারাও গল্পগুলো পড়তে পারে।সবাইকে ভৌতিক গল্পের বেপারে জানান ও ভৌতিক গল্প পড়তে উৎসাহিত করুন।
গল্প : রুম নাম্বার ৩০১ (সম্পূর্ণ পর্ব)
লেখক : আনোয়ার হোসেন
রাজু নিলাকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিল। তারা হাসপাতালে পৌছাতে পৌছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাজু হাসপাতালে গিয়ে দেখে তেমন একটা লোকজন নেই। সে ভাবে হয়তো সরকারী ছুটির দিন, তাই হয়তো লোকজন কম। নিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রিসিপশন থেকে তাদেরকে ৩০১ নাম্বার রুমে পাঠানো হয়। রাজু সাথে দুর্জন নার্স নিয়ে নিলাকে হাসপাতালের তিন তলায় ৩০১ নাম্বার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।
রুমটিতে ডুকেই রাজু খেয়াল করে রুমটি স্যাতসেতে হয়ে আছে। পুরো রুম জুরেই মাকড়সা জাল বানিয়ে রেখেছে। হাসপাতালের এই সিট গুলো এত নোংরা কেন? নিলাকে সিটে শুইয়ে দিয়ে নার্স দুইটা চলে যায়। নিলা বিছানায় শুয়ে রাজুর একটা হাত ধরে রাখে। তখন একটা টিকটিকি নিলার গায়ে উঠে পরে। নিলা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। রাজু টিকটিকি টাকে দূরে ফেলে দিয়ে বলতে থাকে, এইসব মহিলাদের চাকরিতে রেখেছে কারা! হাসপাতালেও টিকটিকি, তেলাপোকা। রাজু খেয়াল করে সেই রুমের ভেতরে কিছু অংশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা আছে।
সে আরেকটি বিষয় খেয়াল করে হাসপাতালে লোকজন একেবারেই কম। সরকারি ছুটি থাকলেও এতো কম লোক তো থাকার কথা না। রুমটিতে ধুলোবালি লেগে আছে। রাজু বলে নিলা তুমি একটু থাকো। আমি দেখি কাওকে পাই কিনা। এই বলে রাজু সেই রুম থেকে বেরিয়ে পরে। আশেপাশে খুঁজলে সে কাওকেই পায়নি। একসময় সে রিসিপশনে গিয়ে সেই নার্সটিকে বিস্তারিত বলে। নার্সটি বলে ঠিক আছে। আপনি যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোক চলে যাবে। রাজু দৌড়ে ৩০১নাম্বার রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে নিলা যন্ত্রনায় ছটফট করছে। নিলা বলে তুমি আমাকে একা ফেলে কোথায় গিয়েছিলে?রাজু বলে নাতো সামনেই ছিলাম আমি।
নিলা বলে আমার না এখানে খুব ভয় করছে।এই রুমটি কেমন যেন...! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। রাজু বলে আরে নিলা তুমি ভয় পেওনা। আর কোনো চিন্তাও করো না। আমি আছি তো। নিলা বলে তুমি আমার পাশে বসে থাকো।কোথাও যাবে না তুমি। কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন বয়স্ক মহিলা এসে রুমটি পরিষ্কার করে চলে যায়। রাজু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সব রুমই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। শুধু ৩০১ রুমটিই নোংরা হয়ে আছে। রাতে একজন ডাক্তার এসে কিছু ওষধ_বড়ি দিয়ে যায়। নিলাকে ওষুধ বড়ি খাইয়ে সে বিছানার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দেখে তার ফোনটি চার্জ নেই। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে সেখানেই দেয়ালে হেলান দিয়েই বসে ঘুমিয়ে পরে।
নিলাও একটাসময় ঘুমিয়ে পরে। মাঝরাতে নিলা শুনতে পায় একটা বৃদ্ধা মহিলা কান্না করছে। নিলা চোখ খোলেই তার পায়ের কাছে একটা মহিলাকে দেখতে পায়। মহিলাটি তার একটা পা ধরে টানছে। মহিলাটি দেখতেও খুব ভয়ানক লাগছে। নিলা চিৎকার করতে থাকে।সাথে সাথে চিৎকার শুনে রাজুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাজু জেগে উঠার পর দেখতে পায়, নিলা কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে। রাজু জিগ্যেস করে, এই নিলা। নিলা তোমার কি হয়েছে? নিলা বলে তাকে নাকি একটা মহিলা পা ধরে টানছিল। মহিলাটা খুবই ভয়ানক লাগছিল।
রাজু হাসে আর বলতে থাকে কোথায়? এখানে তো কেউই নেই। তুমি হয়তো কোনো স্বপ্ন দেখেছো। নয়তো এটা তোমার মনের ভূল ছিল। নিলা বলে না এটা আমি স্বপ্ন দেখিনি।কিছুক্ষণ আগেই এখানে একটা মহিলা ছিল।রাজু বলে তুমি ভয় পেওনা না।আমি তো আছি তোমার সাথে। সে রুমটা ভালো করে খুজে দেখে, কোথাই আশেপাশে তো কাওকে দেখছি না। এখন ঘুমাও। নিলা ভয়ে ভয়ে শুয়ে আছে। রাজু নিলার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। একসময় দুজনই ঘুমিয়ে পরে। পরদিন সকাল বেলা দরজায় কে যেন নক করে। রাজু উঠে দরজা খোলে।
রুম ঝাড়ু দিতে একটা মহিলা এসেছে। মহিলাটি রুম ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়। রাজু বলে তুমি একটু বসো। আমি বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসি।নিলা বলে না। আমি এখানে একা থাকতে পারবো না।। নিলাকে অনেক বুঝিয়ে ৩০১ নাম্বার সেই রুম থেকে রাজু বেরিয়ে পরে। বাহির থেকে খাবার নিয়ে আসার সময় রাজুর চোখ যায় তিনতলার সেই ৩০১ নাম্বার রুমটির দিকে।রাজু দেখে সে রুমের বাহিরে একটা বুড়ো মহিলা দাড়িয়ে রুমের দিকে উকি দিচ্ছে। রাজু কিছুটা অবাক হয়ে দৌড়ে তিনতলায় যায়। সেই রুমের আশেপাশে অনেক খুজেও মহিলাটিকে কোথাও দেখা গেল না। সেই মহিলাটিকে আশেপাশে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রাজু রুমে প্রবেশ করে দেখে নিলা কেমন যেন করছে। একি কিছুক্ষন আগেও তো নিলা সুস্থ ছিল। তাহলে এই অল্প সময়ে তার কি হয়ে গেল। রাজু নিলাকে বার বার ডাকতে থাকে। কি হয়েছে তোমার? এই নিলা চোখ খোলো। কি হয়েছে তোমার। একসময় নিলা অচেতন হয়ে পরে।রাজু দৌড়ে ডাক্তার আনতে যায়। ডাক্তার নিয়ে আসলে রাজু নিলাকে দেখে খুবই অবাক হয়।রাজু দেখে, নিলা একদম সুস্থ আছে। সে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। ডাক্তার নিলাকে দেখে বলে আপনার রোগি তো সুস্থ। একথা বলে ডাক্তার সেখান থেকে চলে যায়।
রাজু খুবই অবাক হয়।এইতো কিছুক্ষণ আগেই তো নিলা বিছানায় কিরকম যেন করছিল। একসময় সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তাহলে এতো তারাতারি কি করে নিলা সুস্থ হয়ে গেল!! সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। যদি তখন নিলা ওয়াশরুমেই যেয়ে থাকে,তাহলে কিছুক্ষণ আগে এই বিছানায় কে শুয়ে ছিল? এটা ভেবেই রাজু অবাক হয়। তাহলে কি ছিল সেটা! এমনিতেও রাজু পেরানরমাল কোনো বিষয়ে বিশ্বাস করেনা। কিন্তু আজ তার সামনে যা ঘঠেছে। তার কি হবে।
নিলা বলে কোথায় তুমি না খাবার আনতে গিয়েছিলে। কোথায় খাবার? রাজু বলে এইতো খাবার। ঠিক আছে তুমি খেয়ে নাও। আমি খাব না বলে রাজু আাশেপাশে সেই মহিলাটিকে অনেক খুজে। কিন্তু মহিলাটিকে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি। বিকেলবেলা নিলা আবারো অসুস্থ অনুভব করে। তাই সেদিন আর তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেনি। সন্ধ্যা বেলা রাজু আবারো খাবার আনতে বাহিরে যায়। খাবার নিয়ে আসার সময় রাজু দেখে,কয়েকজন লোক একটা বৃদ্ধা মহিলাকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। মহিলাটির দিকে তাকিয়ে তো রাজু সত্যিই অবাক হয়।আরে এই মহিলাটিই তো গতকাল নিলার রুমে উকি দিয়েছিল।
রাজু মৃত মহিলাটির সাথে থাকা লোকজনকে জিগ্যেস করে।কে এই এই মহিলা?আর ইনি কবে মারা গেল? লোকগুলোর কথা শুনে রাজুর চোখ কপালে উঠে যায়।লোকগুলো বলে কিছুদিন আগে রোড এক্সিডেন্টে এই মহিলাটি মারা যায়।
রাজু খুবই অবাক হয়।যদি এই মহিলাটি কিছুদিন আগেই মারা যেয়ে থাকে,তাহলে গতকাল সে ৩০১নাম্বার রুমের সামনে কাকে দেখেছিল!রাজু সেখান থেকে দৌড়ে তিনতলায় নিলার কাছে যায়।রুমে প্রবেশ করে দেখে নিলা শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।
রাজু খেয়াল করে রুমের ভেতর একপাশে সাদা কাপড় দিয়ে কি যে ঢেকে রাখা আছে। রাজু দেখে সাদা কাপড়টি দু পাশ থেকে ঝুলে আছে।সাদা কাপড়ের ঝুলানো অংশ এখনো নড়ছে। এটা দেখে সে কিছুটা অবাক হয় ও ভয় পায়।এই রুমটিতে তো এই সাদা কাপড়টি আগে ছিল না। আগে কখনো তো এই সাদা কাপড়টি দেখিনি।সে উঠে দাড়ায়। ভয়ে ভয়ে সে সেই কাপড়টির কাছে যেতে থাকে। এক পা দুই পা করে সামনে এগোচ্ছে। রাজু সেখানে গেলে কাপড়টি সরাতেই সে খুবই ভয় পেয়ে যায়। সে দেখে সেই বৃদ্ধা মহিলাটি ঘুমাচ্ছে। বৃদ্ধা মহিলাটির চোখ দুটো নেই।
তাই বোঝা যাচ্ছে না যে,মহিলাটি জেগে আছে নাকি ঘুমিয়ে আছে। মহিলার মুখ দিয়ে র,ক্ত বের হচ্ছে। রাজু এটা দেখে এতো বেশি ভয় পায়। সর্বনাশ!!! কিছুক্ষণ আগেইতো সে এই মহিলাটিকে মৃত দেখেছে। এইতো কিছুক্ষণ আগেই কয়েকজন লোক ধরাধরি করে বৃদ্ধা মহিলার লাশটি নিয়ে গেল।তাহলে এই মহিলাটি???ঠিক তখনই রাজুর কাধে কে যেন স্পর্শ করে। রাজু ভয় গেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে সেই ভয়ানক চেহারার মহিলাটি দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ দুটো নেই। তবুও বোঝা যাচ্ছে রাজুর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে র,ক্ত বের হচ্ছে। খুবই ভয়ানক লাগছে মহিলাটিকে।রাজু ভয়ে চিৎকার দিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে যায়।তখন সে খেয়াল করে বিছানায় নিলা নেই।আরে কিছুক্ষণ আগেই তো নিলা এখানে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল।রাজু দেখে ভয়ানক সেই মহিলাটি তার দিকেই আসছে।রাজু ভয়ে দৌড়ানো চেষ্টা করে।কিন্তু সে কিছুতেই নড়তে পারছে না।মনে হচ্ছে। কেউ যেন তার পায়ে শক্ত করে ধরে রেখেছে।ঠিক সেইসময় তার কাধে কে যেন হাত রাখে।সে ভয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নিলা দাড়িয়ে আছে।
রাজু বলতে থাকে তুমি ???নিলা বলে কেন? আমাকে দেখে তুমি এমন করছো কেন?রাজু জিগ্যেস করে তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?নিলা বলে আমি একটু ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।রাজু অনেক ভয় পেয়েছে।যে কোনোভাবেই এসব বিশ্বাস করতো না। আজ নিজের চোখে কতো ভয়ানক মহিলাটিকে দেখলো।যা কিছুই ঘটলো সবই তার নিজের চোখের সামনেই। রাজু বলে তুমি কি কিছু দেখেছো বা শুনেছো?
নিলা বলে কই নাতো কিছুই দেখি নি আমি। সে বলে এখানে আর থাকা যাবে না। কাল সকালেই আমরা এখান থেকে চলে যাবো। এখানে আসার পর থেকে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটছে। নিলা বলে সেদিন তো আমি তোমাকে বলেছিলামই যে সেদিন রাতে একটা ভয়ানক মহিলা আমার একটা পা টান দিয়েছো ধরেছিল। তুমি তো আমার কথা বিশ্বাসই করলে না।রাজু বলে শুধু আজকের রাতটা। না না আজ রাত এখানে থাকা যাবে না। যদি রাতে কোনোকিছু ঘটে যায়।সেটা ভেবে রাজু নিলাকে নিয়ে বের হয়ে যায়।
কিন্তু রিসিপশনে এসে দেখে হাসপাতালের মেইন গেইট তালা দেওয়া। ততক্ষণে অনেক রাত হয়ে গেছে। মেইন গেইটে কাওকে দেখাও যাচ্ছে না। চারদিকে তাকিয়ে রাজু বলে এখানে তো দেখছি সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। চারপাশটা কেমন যেন ভূতুরে একটা পরিবেশ। এতটুকু ভয় ও লাগছে রাজুর। দুজনে আবারো সেই ৩০১ নাম্বার রুমে চলে যায়। সেখানে বসে নিলা ও রাজু গল্প করছে। একটা সময় তারা দুজন ঘুমিয়ে পরে।হঠাৎই রাজুর ঘুম ভাঙ্গে। রাজু চোখ মেলে তাকাতেই দেখে,সে বিছানায় নেই!! রাজু এখন সেই রুমের একপাশে রাখা সাদে কাপড়ের নিচে শুয়ানো অবস্থায় রয়েছে।
শরীরের উপড় থেকে কাপড়টি সরাতেই রাজু দেখতে পায়,সেই ভয়ানক দেখতে অবয়ব টি বিছানায় শুয়ে আছে। মানে রাজুর জায়গাতে সেই মহিলাটি শুয়ে আছে। আর রাজু সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা স্থানে শুয়ে আছে। রাজু দেখে মহিলাটি শুয়ে শুয়ে তার দিকে ভয়ানক ভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বৃদ্ধা মহিলাটির মুখ থেকে র,ক্ত ঝড়ছে।ইস্্্ কি বিভৎস দেখতে।হঠাৎ তার নিলার কথা মনে পরে। সে উঠে দাড়ায় আর দেখে নিলা আশেপাশে কোথাও নেই। রাজু ভাবে এর আগের বার তো নিলা ওয়াশরুমে ছিল। হয়তো এইবারো নিলা ওয়াশরুমে আছে। কিন্তু রাজু ওয়াশরুমে গিয়ে নিলাকে পায়নি।
সে দেখে,ভয়ানক মহিলাটি আস্তে আস্তে উঠে দাড়াচ্ছে। এটা দেখে রাজু দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।বাহিরে শুধু অন্ধকার। একি কিছুক্ষণ আগেও তো পরিবেশটা আলোকিত ছিল। হতে পারে বিদ্ুৎ নেই। রাজু দেখে ভয়ানক মহিলাটি আস্তে আস্তে তার দিকে আসছে। এক পা দু পা করে রাজু পিছনে যাচ্ছে। হঠাৎই কারো শরীরে তার ধাক্কা লাগে।রাজু ভয়ে চিৎকার দিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে,নিলা দাড়িয়ে আছে। নিলাকে দেখে রাজু বলে তুমি এখানে?নিলা বলে আমি তো এখানেই ছিলাম।
বিদ্ুৎ ছিল না তো তাই গরমে একটু বারান্দায় এসেছিলাম। নিলা রাজুকে এই অবস্থায় দেখে একটুও অবাক হয়নি।রাজু বলছে চলো এখান থেকে।অন্ধকারের মধ্যেই রাজু নিলার একটা হাত ধরে হাসপাতালের মেইন গেইটের দিকে দৌড়াতে থাকে।পেছন পেছন সেই ভয়ানক মহিলাটিও আসছে। রাজু ভয়ে ভয়ে দৌড়াচ্ছে। একসময় সে খেয়াল করে, তার কাছে নিলার হাতটা অনেক শক্ত লাগছে। অনেকটা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।সে নিলার দিকে তাকাতেই তার চোখ কপালে উঠে যায়। সে এখন ভয়ঙ্কর সেই মহিলাটিকে ধরে আছে।মানে এতক্ষণ যাবত রাজু নিলা ভেবে যার হাত ধরে দৌড়াচ্ছিল,সে নিলা না। তাহলে নিলা গেল কোথায়।
হঠাৎই তিনতলার সেই ৩০১নাম্বার রুম থেকে নিলার গলার আওয়াজ পায়। রাজু নিলাকে ডাকলে, নিলা বারান্দায় এসে দাড়ায় ও রাজুর দিকে ফিরে তাকায়। রাজু জিগ্যেস করে, তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?নিচে আসো জলদি।নিলা উপর থেকে সাড়া দেয়।আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম। তুমি নিচে কি করছো? এখন কথা বলার সময় না। তারাতারি নিচে আসো।এ জায়গাটা ভালো না। ততক্ষণে সেই ভয়ানক মহিলাটা রাজুর কাছেই চলে আসে। রাজু দৌড়ে রিসিপশনের কাছে যায়। সেখানে একজন নার্স ঘুমাচ্ছে।
রাজু ডাক দিলেও সে নার্স টি জাগেনি।নিলাকে আবারো ডাকতে গিয়ে রাজু খেয়াল করে,নিলা তো মাটি থেকে কিছুটা উপরে মানে তিনতলার বারান্দায় নিলা শূন্যে দাড়িয়ে আছে।তাও নিলার পা নেই। এটা দেখেতো রাজু খুবই ভয় পায় এখন সে চিন্তা করে। এটা তো তার নিলা নয়। আর এখানে আশেপাশে কাওকেই দেখা যাচ্ছে না। সে ভাবে কিভাবে এখান থেকে একা বের হওয়া যায়। রাজু দেখে পেছনে একটা গ্লাসের জানালা আছে। সে জানমালার সামনে গিয়ে দাড়ায়। ততক্ষণে নিলা ও ভয়ঙ্কর সেই মহিলাটি তার খুব কাছেই লে আসে। রাজু ভয়ে কোনোকিছু না ভেবে জানালা দিয়ে জুড়ে একটা লাফ দিয়ে রাস্তায় গিয়ে পরে। তখন রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তার ঠিক পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আহ্ বলে রাজু চিৎকার করতে থাকে।
রাজু উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে,তখনও সেই ভাঙ্গা জানালার ফাকা অংশ দিয়ে নিলা তার দিকে তাকিয়ে আছে।নিলা বলছে এদিকে আসো।আমি তোমার সবকিছু ঠিক করে দিচ্ছি।সাথে সেই ভয়ানক মহিলাটিও দাড়িয়ে আছে।রাজু ভয়ে আর সেদিক ফিরে তাকায় নি। সে দেখে একটা রিক্সা আসছে। রিক্সা টিকে থামিয়ে তার বাসার দিকে যেতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে তার বাসায় পৌছে যায়। রাজু দেখে বাসায় ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করা। দরজায় নক করলে, কিছুক্ষণ পর দরজা খুললে সে দেখতে পায়,রুমের ভেতর নিলা দাড়িয়ে আছে। রাজু এখানে নিলাকে দেখে জিগ্যেস করে, তুমি এখানে কি করে!
নিলা জিগ্যেস করে তুমি দুদিন কোথায় ছিলে? তোমাকে কতবার ফোনে ট্রাই করলাম।একটা বারও কল ডুকেনি। তোমার ফোনটি বন্ধ পেয়েছি। রাজু তার ফোনটি বের করে দেখে। হ্যাঁ তাইতো , তার ফোনটি আসলেই বন্ধ। সে ভেতরে প্রবেশ করে। রাজু বাসায় গোসল সেড়ে বসে আছে। এপাশেই নিলা বসে আছে।রাজু এক গ্লাস পানি পান করছে আর ভাবছে নিলা যদি বাসায় থেকেই থাকে,তাহলে এই দুদিন আমার সাথে কে ছিল? বা সেদিন বাসা থেকে নিলা মনে করে আমি কাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম ! সেটা ভূত ছিল না তো আবার!
সমাপ্ত।
গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে,তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।আপনার একটা কমেন্টই ভৌতিক গল্পকে নতুন গল্প লিখতে উৎসাহীত করবে।আর একটা কথা ,আপনার আশেপাশে পরিচিত যারা ভৌতিক গল্প পড়তে পছন্দ করে।তাদেরকে ভৌতিক গল্পে আমন্ত্রন করে গল্প পড়ার সুযোগ করে দিন।যাতে তারাও গল্পগুলো পড়তে পারে।সবাইকে ভৌতিক গল্পের বেপারে জানান ও ভৌতিক গল্প পড়তে উৎসাহিত করুন।
গল্প : রুম নাম্বার ৩০১ (সম্পূর্ণ পর্ব)
লেখক : আনোয়ার হোসেন